রাষ্ট্রদূত পদ পাচ্ছেন অধ্যক্ষ সাজু

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষকনেতা শাহজাহান আলম সাজুকে বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত করার সিন্ধান্ত হয়েছে। মানামায় রাষ্ট্রদূতের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ক’মাস আগে বাহরাইনে একজন কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু প্রস্তাবিত দূতকে গ্রহণ করেনি মানামা। ফলশ্রুতিতে শাহজাহান সাজুকে পাঠানোর নতুন ওই সিদ্ধান্ত!। মানামা গ্রহণ করলে ৩ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন তিনি। দায়িত্বশীল একাধিক সরকারি সূত্র বিষয়টি জানিয়েছেন।

সাজু’র শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি এবং মাধ্যমিক অবধি পড়াশোনা আশুগঞ্জে হলেও পরবর্তীতে তিনি  ঢাকায় চলে আসেন। গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তরিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজ জীবন থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। আশুগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠা করেন কারিগরি ও বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয় এবং নিজেই অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকই তার মুখ্য পরিচয়। 

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজু’কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব করা হয়। দফায় দফায় চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে তাকে একই পদে রাখা হয়েছে। বিএনপিত্যাগী প্রবীণ সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তারের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে গত বছরের শেষার্ধ্বে শূন্য হয় ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন। ১৫ই নভেম্বর ওই আসনে উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে নৌকা তথা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন ড. শাহজাহান আলম সাজু। পাঁচ দশক আগে ওই আসন থেকে হারিয়ে যাওয়া নৌকা পুনরুদ্ধার করেন তিনি। যদিও সেই নির্বাচনে তীর্থের কাকের মতো ভোটারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন ভোটগ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আশুগঞ্জের বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটাভুটির চিত্র সেদিন ভাইরাল হয়েছিল। যাক, নির্ধারিত সময়ে এমপি হিসেবে শপথ নেন বিজয়ী শাহজাহান সাজু। একাদশ সংসদে সর্বশেষ অন্তর্ভুক্ত সদস্য হিসেবে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তার শপথবাক্য পাঠ করান। কিন্তু ততক্ষণে ওই সংসদের কার্যক্রম প্রায় শেষ!

শপথ অনুষ্ঠানের আড়াই ঘণ্টার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার রিজার্ভেশন সত্ত্বেও আগারগাঁওয়ের সেই হুইসেলে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু করে। দ্বাদশ সংসদের ওই নির্বাচনে শাহজাহান আলম সাজুকে ফের মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। নিজেকে ‘আড়াই ঘণ্টার এমপি’ হিসেবে উপস্থাপন করে তিনি ভোটের মাঠে নামেন। মুহূর্তেই মেঘনা বিধৌত আশুগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নেন পরিচিত মুখ সাজু। কিন্তু না, সেই ভোটে তিনি টিকতে পারেননি। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সব সমালোচনা অগ্রাহ্য করে নজিরবিহীনভাবে বিরোধী জাতীয় পার্টির সঙ্গে নীরবে আসন সমঝোতা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই ঘটনার বলি হন নৌকার প্রার্থী সাজু। দলীয় সিদ্ধান্ত তথা হাইকমান্ডের নির্দেশে সেদিন  বিনাবাক্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য হন তিনি। 

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন এবং ভোটারের কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মাঠে খাটেন কৌশলী ছাত্রনেতা থেকে ক্রমে শিক্ষকনেতা হয়ে ওঠা শাহজাহান সাজু। যদিও ৭ই জানুয়ারির আলোচিত সেই নির্বাচনে আশুগঞ্জ আসনে জাপা’র প্রার্থীর ভরাডুবি শেষ পর্যন্ত ঠেকানো যায়নি। এমপি হলেও জাতীয় সংসদে অধিবেশনে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকা শাহজাহান সাজুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন-  ভোটের মাঠ থেকে মাঝপথে সরে দাঁড়ানোর (মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার) বিষয়টি ছিল তার জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। কিন্তু তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন কোনোরকম উচ্চবাচ্য ছাড়াই। তাছাড়া ছাত্র জীবন থেকে দলের জন্য তার ত্যাগও রয়েছে। সব মিলিয়ে ‘পুরস্কার’ হিসেবে হয়তো রাষ্ট্রদূত পদে তার এই মনোনয়ন! সেগুনবাগিচা বলছে, রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে বাহরাইন ছাড়াও বাংলাদেশের আরও ৮টি বৈদেশিক মিশনে পরিবর্তন আসছে। নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদেশে মিশন প্রধান পদে বৃহৎ আকারে এটি হবে দ্বিতীয় রদবদল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! জাল সনদে চাকরি, লাইব্রেরিয়ানকে তলব - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি, লাইব্রেরিয়ানকে তলব শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002816915512085