দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করায় কোনো আইনের ব্যত্যয় হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, দুদক আইনের ৯ ধারায় কর্মাবসানের পর দুদকের কমিশনার প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না, সেটা বলা আছে। এটার ফলে অনেকে বলতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদটি একটি লাভজনক পদ। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে কেউ নিয়োগ দান করেন না। তিনি নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন প্রচলিত প্রথা অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করেছে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবনে তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় সিইসি বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির প্রশ্নে যদি এ ধরনের অবান্তর বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়, সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।
রাষ্ট্রপতি পদে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। এ নির্বাচনের নির্বাচনকর্তা ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক কি না, তা একবার আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এ নিয়ে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা হয়েছিল। ওই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। তখন হাইকোর্টে রিট মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, প্রধান বিচারপতি থেকে অবসর নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হওয়া যায় না। ফলে সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করতে পারেন না। রিট মামলার সেই অভিযোগের শুনানি শেষে সে সময় হাইকোর্ট রাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক নয় বলে রায় দিয়েছিলেন।
আজ সেই রায়ের কথা উল্লেখ করে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনকর্তা হিসেবে রায়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলাম। পরীক্ষা করার সময় যেটাকে বাছাই বলে, এটা কিন্তু কোনো দায়সারা গোছের দায়িত্ব নয়। প্রার্থী যা–ই বলুক না কেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব প্রার্থীর কোনো আইনগত অযোগ্যতা আছে কি না, তা দেখা। আমরা দেখলাম, কোনো আইনগত অযোগ্যতা নেই। সেটা এ কারণে, ৯ ধারায় বলা হয়েছে, অবসরের পর কোনো কমিশনার প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। আমরা কিন্তু এখান থেকে প্রার্থীকে নিয়োগ দান করিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দান করেননি। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করেননি। কেউ নিয়োগ দান করেন না। কেউ নিয়োগ দান করতে পারেন না। উনি নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা ওনাকে নির্বাচিত করেছি প্রচলিত প্রথা অনুসারে।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন ও নিয়োগের মধ্যে যে পার্থক্য, এটা বুঝতে হবে। তাঁকে (মো. সাহাবুদ্দিন) যদি এখন থেকে নিয়োগ দান করা হতো, তবে তা অবশ্যই অনিয়ম হতো। আমাদের জাতীয় সংসদের সদস্যরা নিয়োগপ্রাপ্ত হন না, তাঁরা নির্বাচিত হন। সেটাই তাঁদের নিয়োগের সমতুল্য।’
কাজী হাবিবুল আউয়ালের কথা, ‘সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের চূড়ান্ত একটি রায় রয়েছে। সেখানে বলে দেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বা সেই অর্থে দুদকের কমিশনারকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ কোনোক্রমেই অবৈধ নয়। তাই এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি অনাবশ্যক।’
সিইসি বলেন, ‘আমি কিন্তু বারবার একটি বিষয়ে স্ট্রেস (জোর) দিচ্ছি একটি বিষয়ে, সেটা হলো নিয়োগ। ইলেকশন (নির্বাচন) এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট (নিয়োগ) এক জিনিস নয়। মানুষ যখন ইলেকটেড হয়, তখন তার চরিত্র একটি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির সম্পর্কে যদি এ ধরনের অবান্তর বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়, সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।’