যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঘনিষ্ঠজনদের তিনি বলেছেন, 'আমি ভালো অবস্থায় নেই, যেকোনো সময় চলে যেতে পারি।' তার পরামর্শেই গত সোমবার পদত্যাগ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আজ পদত্যাগ করার কথা রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ চার কমিশনারের।
গত রোববার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের টেলিফোনে দুই দফা আলোচনা হয়। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে, টেলিফোনে কথা বলার সময় সিইসিকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ওই দিন সকালে প্রথমে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ফোন করেন। পরে বিকেলে সিইসিকে ফোন করেন রাষ্ট্রপতি। দুই দফায় টেলিফোন আলাপে রাষ্ট্রপতির পরামর্শে পদত্যাগে সম্মত হন কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপের বিষয়টি চার নির্বাচন কমিশনারকে অবহিত করেন সিইসি। তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, পদত্যাগের বিষয়ে পরামর্শ চাইলে রাষ্ট্রপতি তাকে বলেছেন 'আপনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে 'মানসম্মান নিয়ে চলে যান। আমারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আমিও পদত্যাগ করে চলে যেতে পারি।'
রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ ও পদত্যাগ সম্পর্কে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫০-এর দফা (১)-এ বলা হয়েছে, 'এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাঁহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন।' একই (৫০) অনুচ্ছেদের দফা (৩)-এ বলা হয়েছে, 'স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।' যদিও পদত্যাগের কারণে স্পিকারের পদটি এখন শূন্য রয়েছে। স্পিকার পদত্যাগ করেছেন, তা গৃহীত হয়েছে: ডেপুটি স্পিকার জেলে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কার কাছে পদত্যাগ করবেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান গতকাল বুধবার রাতে বলেন, স্পিকার পদত্যাগ করলেও ডেপুটি স্পিকার রয়েছেন। তিনি 'জেলে আছেন ঠিক, কিন্তু এখনো তার অপরাধ প্রমাণ হয়নি। তাই তার (ডেপুটি স্পিকার) পদ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদের দফা ৩ ও ৬-এর উল্লেখ করেন। দফা ৩-এ বলা হয়েছে, 'স্পিকারের পদ শূন্য হইলে বা তিনি (রাষ্ট্রপতিরূপে কার্য করিলে) কিংবা অন্য কোনো কারণে তিনি স্থীয় দায়িত্বপালনে অসমর্থ বলিয়া সংসদ নির্ধারণ করিলে স্পিকারের সকল দায়িত্ব ডেপুটি স্পিকার পালন করিবেন।' সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদের দফা ৬-এ বলা হয়েছে, 'ক্ষেত্রমত স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাঁহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্থীয় পদে বহাল রহিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।'
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পর সাংবিধানিক সংকট হতে পারে কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গতকাল বলেন, সার্বিকভাবে সংবিধান এখন বন্ধ রয়েছে। অতএব সংবিধানে কী সংকট হচ্ছে না হচ্ছে- এটা এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূল কথা হলো গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র মেরামত ও সংস্কারের যে কাজগুলো হচ্ছে বা শুরু করা হয়েছে, সেখানে সংবিধানের বাইরের অনেক কাজ হচ্ছে। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে কোন কাজটা সংবিধানের ভেতরে কিংবা বাইরে হচ্ছে, সেই প্রশ্নের গুরুত্ব খুবই কম।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় চমক ছিল রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন। বিসিএস (বিচার) ক্যাডারের সাবেক এই কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এরপর পাঁচ বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারের দায়িত্বও পালন করেন। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।