ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম) আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা যদি দুর্নীতিমুক্ত হন তাহলে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। একটি দুর্নীতি মামলায় সাজা বাতিল করে আপিলের রায়ে এ মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমের সমালোচনা করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, দুদক হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শ্রম, অর্থ ও মেধা ব্যয় না করে পাঁচ-দশ হাজার টাকার নগণ্য দুর্নীতির পেছনে জনগণের কষ্টের টাকা ব্যয় করছে। গতকাল বুধবার রায়টির ৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সরকার ও টেকনিশিয়ান আবদুর রহিমের আপিল মঞ্জুর করে গত বছর ১৪ ডিসেম্বর রায় দেয় বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত কর্তৃক দুজনকে দেওয়া পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদ-ের রায় বাতিল করে হাইকোর্ট। রায়ে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি দুর্নীতি নির্মূলে জাতীয় সংসদকে ১৬টি পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতি আশরাফুল কামাল।
আদালত বলে, ‘পাঁচ হাজার টাকার দুর্নীতির মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে মর্মে জানা যায়।’ হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখে বলে, ‘জনগণের কষ্টের টাকার এমন অপব্যবহার কতটুকু সমীচীন?’ আদালত মনে করে, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। এর (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) আওতাভুক্ত প্রতিটি ব্যক্তি দুর্নীতিমুক্ত হলে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য।
হাইকোর্ট আশা করেছে যে, জাতীয় সংসদ আদালতের দেওয়া পরামর্শগুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরামর্শগুলো হলো দুদকের জন্য একটা স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস গঠন করা, দুদকের অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও পৃথক, স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন নিয়োগ বোর্ড গঠন করা, দুদকের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণ দাখিল করা এবং প্রতি বছর তাদের সম্পত্তির হিসাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে থেকে দুদকের চেয়ারম্যান
এবং হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্য থেকে দুদকের সদস্য নির্বাচন করা, সৎ, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সমন্বয়ে উচ্চ ও অধস্তন আদালতে পৃথক প্রসিকিউশন প্যানেল গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৭ (ক) ধারার আওতা ও পরিধি বৃদ্ধি করা এবং ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে ১৯৮৬ (জুলাই, ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) ১ থেকে ২৫ নম্বরে থাকা (সাংবিধানিক দায়মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত) ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা সংক্রান্ত বিধান সংযুক্ত করা, দুর্নীতিবিষয়ক প্রতিটি অনুসন্ধান এবং তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করা।