রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণে শিক্ষাবোর্ডে বেপরোয়া ঘুষ

রুম্মান তূর্য |

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের জোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে। কার্ড সংগ্রহে বোর্ডে আসা প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকে তারা প্রকাশ্যেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

জানা গেছে, বোর্ডের বিদ্যালয় শাখা থেকে গত ১ নভেম্বর বিরতণ শুরু হওয়া আগামী বছরের এসএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণে এমন অনিয়মের মচ্ছব চলছে। প্রথম দিন ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের কার্ড বিতরণ করা হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিতরণ হয় গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড।

রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহ করা একাধিক প্রধান শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বিদ্যালয় শাখায় গেলেই টাকা দিতে হয়। তা না হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গত বুধবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণের সময় রীতিমতো চেয়ার পেতে বসে এক কর্মচারী টাকা তুলেছেন। ঢাকার বড় প্রতিষ্ঠানের প্রতিটির কাছে ১ হাজার টাকা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে। তবে, পরিচিত শিক্ষক নেতা বা তাদের স্কুলগুলোর কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে না। 

দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে একজন প্রধান শিক্ষক আক্ষেপ, বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়েছে। সে টাকার কোনো রশিদ থাকলে বিল-ভাউচার করা যেতো। কিন্তু তা তো আর দিলো না। টাকাটা নিজের পকেট থেকেই গেলো।  

অপর এক প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বোর্ডে যেতে আসতে ৩০০ টাকা খরচ হয়। যে কর্মচারী রেজিস্ট্রেশন কার্ড আনতে গিয়েছিলেন তার থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। টাকাটা ওই কর্মচারীর খরচ হিসেবে লিখলেও কমিটি প্রশ্ন তুলবে, ৩০০ টাকার ভাড়া কেনো ৮০০ টাকা হয়েছে। তাই নিজের পকেট থেকেই টাকাটা দিতে হয়েছে। 

এদিকে এক শিক্ষক সংগঠনের শীর্ষ পদধারী নেতা ও রাজধানীর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার ক্লার্ক রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এভাবে টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানান নি। তবে কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে টাকা নেয়ার আভাস পেয়েছি। ওই কর্মচারী যে আমার প্রতিষ্ঠানের তা হয়তো বোর্ডের লোকজন জানেন। তাই তার কাছে টাকা চাননি। 

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বোর্ডের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করেন। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, কর্মচারীরা এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে ‘কি-বলবো’, তারা কোনো নির্দেশনাই মানতে চান না। এতে বোর্ড ও কর্মকর্তাদের বদনাম হচ্ছে। বিষয়টি বোর্ড চেয়ারম্যানে নজরে আনা দরকার।  

বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাঁ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, রেজিস্ট্রেশন কার্ড নেয়ার জন্য টাকা দেয়ার কোনো বিধান নেই। যারা দিয়েছেন তারা অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো। 
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নেবো। এভাবে টাকা যিনি নিয়েছেন তিনি অনৈতিকভাবে নিয়েছেন, যিনি দিয়েছেন তিনিও অনৈতিকভাবে দিয়েছেন। কেউ টাকা দাবি করলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী পরিষদ সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দিলে সংগঠনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
তিন কলেজ শিক্ষার্থীদের সং*ঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রবাড়ি - dainik shiksha তিন কলেজ শিক্ষার্থীদের সং*ঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রবাড়ি রিকশার ধাক্কায় জাবি ছাত্রীর মৃত্যু, ৩ জনকে পুলিশে সোপর্দ - dainik shiksha রিকশার ধাক্কায় জাবি ছাত্রীর মৃত্যু, ৩ জনকে পুলিশে সোপর্দ নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029671192169189