গত ২৬ ও ২৭ মে বাংলাদেশ উপকূলে তাণ্ডব চালানো ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের এক হাজার ২৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, শিক্ষা কার্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে। অর্থের হিসাবে যা প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। কিছু আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রেমালের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মন্ত্রণালয়-ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে ঘূর্ণিঝড় রেমালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৬১৩টি স্কুল, ৫৬টি কলেজসহ মোট ৬৬৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩১ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ৬০৫টি প্রাথমিক স্কুল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, পিটিআই, বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ ৭৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রেমালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেমালে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালী জেলাতে। এই জেলায় ২১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এগুলো মেরামত বা সংস্কার করতে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ২৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খুলনা বিভাগের ৩৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। বিবরণ অনুযায়ী, এ ঘূর্ণিঝড়ে সাত হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ২৫২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। রেমালের প্রভাবে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে ৩৫ হাজার ৬০২ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫৯ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমির ফসল। কৃষির সার্বিক ক্ষতি ৭১২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬২ টাকা।
পাকা ঘর, আধা পাকা ঘর ও কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৫২১টি। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৩টি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ ও কালভার্টের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৯৮টি এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ১২৩টি। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫১ দশমিক ৯০ কিলোমিটার সড়ক।
আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কিলোমিটার সড়ক। ইটের খোয়ায় নির্মিত ১২২ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজার ৭১৯ কিলোমিটার সড়ক। কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৬ কিলোমিটার।
মসজিদ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৩টি, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৯৫৮টি। মন্দির সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০টি, আংশিক ৫৬১টি। গির্জা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি। বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে ২৩২ কিলোমিটার, আংশিক ৪১৩ কিলোমিটার। কৃষিভিত্তিক ৩১টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। অ-কৃষিভিত্তিক ৫২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।