বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। বিভিন্ন মুসলিম দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের লোকজন আচার-অনুষ্ঠান যথারীতি ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করে থাকেন। ইসলাম ধর্মের লোকজনের অন্যতম ইবাদত মাহে রমজানের রোজা। আল্লাহর নৈকট্য লাভের অভিপ্রায়ে তারা রোজা রাখেন। রমজান মাসের রোজা ফরজ ইবাদত। পবিত্র রমজান মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আরবি অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসের ফজিলত অনেক বেশি। এ মাসে সারাদিন না খেয়ে বান্দা সৃষ্টিকর্তার রহমত পাওয়ার জন্য রোজা রাখেন।
এ মাসে রোজা ও ইবাদতের মাধ্যমের শিশু শিক্ষার্থীদের মনে সংযমসহ খারাপ অভ্যাসগুলো দূর করার হাতে খড়ি হয়। এতে তাদের মাঝে পরবর্তীকালে ধর্মপ্রাণ, সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হতে থাকে।
কিন্তু ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা শহরের ৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরিপ করে দেখা গেছে, রোজায় বিদ্যালয় খোলা থাকায় গড় উপস্থিতি ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা রোজা রাখেন ৩৩ শতাংশ, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ, চতুর্থ শ্রেণির ৬৬ শতাংশ, ৫ম শ্রেণির ৮৩ শতাংশ জন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ওপর জরিপ করা হয়েছে। রোজা রাখার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। শিক্ষার্থী উপস্থিতির বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের কোনো চাপ থাকে না। এ বিপুল অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করার জন্য রোজার মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হলেও উল্টো শিখন ঘাটতি বৃদ্ধি পায়। সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভাবনা হওয়া উচিত, অফিস-আদালতের কাজ আর শিক্ষকতা একই ধরনের পেশা নয়। শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা, আসা যাওয়ার, হৈ-চৈ এর মাঝে থাকাসহ অনেকটা তাদের দৌড়ের ওপর থাকতে হয়। প্রতিদিন শিক্ষককে কমপক্ষে ৬টা থেকে ৯টা ক্লাস নিতে হয়। রোজা রেখে ১ম দিকে দু-একটা ক্লাস যথাযথভাবে নিলেও ক্ষুধার্ত শরীরে ক্লান্তিতে পরে ক্লাসগুলো দায়সারা নেয়া ব্যতিরেকে কোনো উপায় থাকে না। এ দায়সারা শিক্ষার্থীর পাঠদানের মাঝেও ব্যাপক শিখন ঘাটতি হয়ে যায়। শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানসিক প্রশান্তির জন্য প্রচুর বিশ্রাম প্রয়োজন। এদিক বিবেচনা করে ইংরেজ আমল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ছুটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিভিন্ন দিক বিচার বিশ্লেষণ করে অতীত থেকে আমাদের দেশে রোজায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শুক্র ও শনি সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করেছেন। উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষক নারী। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ওপর ঘর সংসারের রান্না, ছোট ছেলে-মেয়েদের দেখভালসহ ঘরের সব কাজ করতে হয়। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার, সন্ধ্যা ও ভোরে খাবার তৈরিসহ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় পাঠদানে তাদের পবিত্র রমজানের ইবাদতের বিঘ্ন হয়।
শিখন ঘাটতি দূর করার জন্য সর্বাগ্রে শিক্ষক ঘাটতি জিরোতে নামিয়ে আনতে হবে। প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তির কার্যক্রম ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে। গত ১ জানুয়ারি বই বিতরণ শেষে ২ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে শ্রেণির কার্যক্রম চালু করলে শিখন ঘাটতি অনেকটা হ্রাস পাবে।
বর্তমানে জানুয়ারির পুরোপুরি শ্রেণির কার্যক্রম অনেক বিদ্যালয়ের দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে এ অবস্থা বেশি দেখা যায়। শিখন ঘাটতি দূর করার জন্য পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার করার সুপারিশ করা প্রয়োজন। শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান নানা অহেতুক কারণে শ্রেণির বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অবহেলা করে থাকেন। এ বিষয়ে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের তৎপর হতে হবে।
উচ্চ বিদ্যালয়গুলো বিগত বছরগুলোতে পরীক্ষার কার্যক্রম নভেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করে থাকেন। শিখন ঘাটতি দূর করার প্রয়াসে ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মূল্যায়ন বা পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ করা উচিত। রমজানে ব্যাপক শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি বিবেচনা করে শিখন ঘাটতি আরো বৃদ্ধি না করে রমজান মাসে শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান করতে হবে। পরিশেষ শিখন ঘাটতি দূর হওয়ার প্রত্যাশায় করছি।
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।