রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে গত ১৩ মার্চ অষ্টম শ্রেণির ৫৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এসেছে মাত্র ৩ জন। রোজা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে সেখানে। সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত দোয়ারাবাজার উপজেলাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসছে না। শিক্ষকরা শুধু নির্ধারিত সময়ে হাজি হচ্ছেন। অফিস বা টিচার্স রুমে বসে থাকছেন তারা। মৌলভীবাজারের রাজনগরের বকশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তেমন শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেই। রোজায় স্কুল কেমন চলছে- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এসব চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এই চিত্র শুধু ওই তিনটি স্কুলের নয়; বেশির ভাগ স্কুলেই। বিশেষ করে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি একেবারে নগণ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শিখন ঘাটতি কমানোর জন্য চলতি রমজানে প্রথম ১০ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫ দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলার রাখার নির্দেশ দেয় স্ব স্ব অধিদপ্তর। এই নির্দেশের বিপরীতে সংক্ষুব্ধরা আদালতে পর্যন্ত যান। আদালতও রোজায় স্কুল খোলার রাখার পক্ষে নির্দেশ দেন। কিন্তু এত কিছু করে রোজায় স্কুল খোলা রাখলেও কোনো সুফল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। কয়েকটি শহরকেন্দ্রিক স্কুল বাদ দিলে দেশের অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুব সামান্য। কেন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছে না তারও কোনো নজরদারি (মনিটরিং) নেই।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের মতে, সাপ্তাহিক ছুটি ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ঘিরে গত শুক্র, শনি ও রবিবার মোট তিন দিনের চিত্র জানতে পারিনি। গতকাল সোমবার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কেমন ছিল তা জানাতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন আসার পরে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব। তিনি বলেন, রোজায়ও শিক্ষা কার্যক্রম জনপ্রিয় করানোর জন্য আমরা একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি এর সুফল দেখতে পাওয়া যাবে। 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান স্কুলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চললেও গ্রামের স্কুলগুলোতে কিছু প্রভাব পড়েছে। এর দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হচ্ছে- বছরের শুরুর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পড়াশুনায় চাপ নেই। ঈদের পরে ভালো করে পড়ব- এমনটি হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে- উদ্দেশ্যমূলকভাবেও কেউ সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে না পারে। তবে যেটাই হোক না কেন, আগামী বছর থেকে রোজায় শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে বলে আশাবাদ জানান তিনি। তার মতে, আমাদের দেশেই মাত্র ১২ /১৩ বছর আগেও রোজায় প্রথম কয়েকদিন স্কুল খোলা থাকতো।  পৃথিবীর বহু দেশে রোজায় স্কুল চালু আছে। বাংলাদেশেও এটা চালু রাখতে হবে। এতে সন্তানদেরই পড়াশোনায় ভালো হবে বলে জানান তিনি। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রোজায় স্কুল খোলা থাকলেও কেন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই- এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, বছরের শুরুতে স্কুল ছুটির তালিকায় পুরো রমজান মাসকে ছুটি আওতায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ছুটি বাতিল করে বলা হলো, রমজানে স্কুল খোলা থাকবে। এই সিদ্ধান্ত বহু অভিভাবক মানতে পারেননি। 

যশোরের ঝিকরগাছার গঙ্গানান্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয় চলছে। নবম শ্রেণিতে ৭টি এবং অন্যান্য শ্রেণিতে ৬টি করে ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু ৩টি ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। রোজায় শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতি ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি বছর রমজান মাসজুড়ে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখার দাবিতে বেশ আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতেও। বর্তমান শিখন কাঠামোতে ১৮৫ দিনের বেশি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার হিসাব ধরে আগামী বছরের শিক্ষাপঞ্জিকা করা হবে। এতে রোজায় ছুটি কমে যাবে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বছরে অন্তত ১৮৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রম প্রয়োজন। সে কারণে ছুটি আর বাড়ানোর সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিখনঘণ্টা ঠিক রাখতে হবে, আর সে কারণেই আমরা আগামী বছরের শুরুতেই হিসাব-নিকাশ করে শিক্ষাপঞ্জিকা প্রকাশ করব। আগামীতে রমজান মাসজুড়ে ছুটি না দিলে ধর্মীয় কারণে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে রমজানে ছুটি মাত্র ২ দিন, পাকিস্তানে ৩ দিন। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে রমজান মাসজুড়ে ছুটি নেই। সেসব দেশে রোজার মধ্যে বিদ্যালয় চলতে তো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের কেন হবে? তাছাড়া বাংলাদেশে একসময় শবে কদর থেকে ঈদ পর্যন্ত ছুটি থাকত। তখন তো সমস্যা হয়নি, কেউ আপত্তিও করেনি। তাহলে এখন কেন হবে?

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে তথ্য সংগ্রহসহ নানা কারণে আগের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হবে। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি একদিন বাড়ানো হয়েছে। শুধু সাপ্তাহিক ছুটিই আছে ১০৪ দিন। ফলে শিখনঘণ্টা ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ১৮৫ দিন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। শিখনঘণ্টা ঠিক রাখতে বাড়তি দিন হিসেবে ধরে শিক্ষাপঞ্জিকা করার সময় এসেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052528381347656