প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন মেনে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) ১ হাজার ১৮৭ পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরে দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হলে সপরিবারে শিক্ষা ভবনে অবস্থান নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক আমাদের বার্তার এক প্রশ্নের জবাবে তারা এ আলটিমেটামের তথ্য জানান। সেসিপ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সভাপতি ও ঢাকার বাড্ডা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিম।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অমান্য করে রাজস্বখাতে স্থানান্তর থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সেসিপের ১ হাজার ১৮৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। কয়েকদফা মেয়াদ বাড়ানোর পর সেসিপের মেয়াদ শেষ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে। এর মধ্যে এই জনবল রাজস্বখাতে না আনা হলে আমাদের চাকরি শেষ। আমাদের দাবি আগামী রোববারের মধ্যে না মানা হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। প্রয়োজনে সপরিবারে শিক্ষা ভবনে অবস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে অবস্থান নেবো।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেসিপ প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়। সেসিপের ফলোআপ হিসেবে ২০০৭ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন মেয়াদে এসইএসডিপি হাতে নেয়া হয় এবং এর ফলোআপ প্রজেক্ট হিসেবে সব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) চালু করা হয়, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। সেসিপে অধীনে নিযুক্ত এ কর্মকর্তারা বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কারিকুলাম বাস্তবায়ন, হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসার, আইসিটিভিত্তিক শিক্ষার প্রসার, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ, স্কুল মনিটরিং ও নিবিড় একাডেমিক সুপারভিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল শক্তিশালীকরণ ও সফটওয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধান, সাধারণ শিক্ষা ধারার সঙ্গে চালু করা ভোকেশনাল ট্রেড কোর্স বাস্তবায়নে মনিটরিং, নকল মুক্ত পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনসহ সব পর্যায়ের নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন, বিজ্ঞান ও উন্নয়ন মেলা আয়োজন, বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনা, শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আয়োজনসহ প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের করোনা টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়নের মত জাতীয় কার্যক্রমে সেসিপের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। নতুন শিক্ষাক্রমের উপযোগিতা যাচাইয়ের পাইলটিং কার্যক্রমসহ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
সভাপতি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেসিপের ১ হাজার ৪৩৯টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন অনুশাসন দিয়েছেন। সে অনুশাসন বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মোট ১ হাজার ১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরে সম্মতি জ্ঞাপন করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের ১ টি, প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞের ১টি, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞের ২ টি, প্রোগ্রামারের ১টি, শিক্ষা পরিসংখ্যানবিদের ১টি, মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারের ১টি, সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারের ৭ টি, থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ২৫টি, থানা একাডেমিক সুপারভাইজার ২৫টি, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ৪৭২টি, গবেষণা কর্মকর্তা ৮৬টি, সহকারী পরিদর্শকের ২৪৪টি, সহকারী প্রোগ্রামারের ৫৬টি, ডিস্ট্রিক্ট ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের ৫৯টি, সহকারী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ২১টি,কম্পিউটার অপারেটরের ২১ টি, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ৬টি, হিসাবরক্ষকের ১টি, হিসাবরক্ষকের ১৬টি ,কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারীর ১৭টি, গাড়ীচালক ১৫টি, অফিস সহায়ক ৫৯টি, নাইট গার্ডের ২৫টি, পরিচ্ছন্নকর্মী ২৫টিসহ মোট ১ হাজার ১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরে সম্মতি জানিয়েছিলো। পরে অর্থ বিভাগ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি ওই ১ হাজার ১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সম্মতি না দিয়ে করে জনবল ছাড়া শুধুমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রামের ৮০১টি পদ সৃজনের সম্মতি দেয়। সে বছরের ২০ জুন ১ হাজার ১৮৭ টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ পুনরায় অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠায়। তবে সে বছরের ২৮ জুন অর্থ বিভাগ ফের অসম্মতি জানায়।
তিনি আরো বলেন, সেসিপ প্রোগ্রামে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী, ৭৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-পোষ্য কর্মরত। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে এখনো ইনক্রিমেন্টবিহীন স্কেলভিত্তিক বেতনে কর্মরত আছেন তারা। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষিত, ১০-২৪ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ১ হাজার ১৮৭ জনবলকে প্রকল্প শেষে চাকরিচ্যুতি থেকে রক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি। এ ১ হাজার ১৮৭টি পরিবারকে মানবেতর জীবন-যাপন থেকে মুক্তি দিতে পদগুলো জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, প্রথাগত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়ন শেষে এর আওতায় কর্মরত জনবলের দায়িত্বও শেষ হয়ে যায়। তবে সেসিপের জনবল শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের অপরিহার্য অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত, ৮ থেকে ২২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেসিপে মাঠপর্যায়ে ওই ১ হাজার ১৮৭টি পদে কর্মরত আছেন। তাদের নতুন করে সরকারি চাকরির আবেদন করার বয়সও নেই। ওই ১ হাজার ১৮৭টি পদের জনবল বর্তমানে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেসিপ প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেলেও ওইসব জনবলের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শামীমা ফেরদৌসি, ঝিনাইদহর সহপরিদর্শক মোজাফফর হোসেন পলাশ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মনিরুজ্জামান খান, লালবাগের থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন সুলতানা কেয়া, চট্টগ্রামের গবেষণা কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এবং বাড্ডা থানার একাডেমিক সুপারভাইজার ইমতিয়াজ দেওয়ান মুরাদ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।