রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্রেনেডের উৎস কী, নেপথ্যে কারা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগ্নেয়াস্ত্রের মজুত ও সন্ত্রাসী আখড়ায় অত্যাধুনিক গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  এগুলো কারা কীভাবে এখানে এনেছে চলছে তার খোঁজখবর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালালেও এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি উৎস সম্পর্কে। গ্রেনেডটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেছে রামু সেনানিবাসের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট । তবে এর সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), আরসাকে ঠেকাতে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে তৎপর মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরেক বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আল ইয়াকিন, ইসলামী মাহাজ নবী হোসেন গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপ- এদের যে কারো জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়া দিচ্ছেন না অনুসন্ধানকারীরা।

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজকে বলেন, মিয়ানমারে সীমান্ত এলাকাগুলোতে তাদের বিদ্রোহীগোষ্ঠী রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় গ্রেনেড ছাড়াও অন্যান্য সামরকি অস্ত্র সংগ্রহ করে। অনেক সময় সেসব অস্ত্রই অর্থ বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে বিনিময় হয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানেও যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেগুলো রয়েছে- সেখানে অনেক ধরনের অপশক্তি কাজ করে। যেমন সেখানে রয়েছে অপরাধ চক্র, জঙ্গি চক্র ও মিয়ানমার সামরিক জান্তার গোয়েন্দা চক্র। সবকিছু মিলিয়ে এখানে নাশকতা করা তুলনামূলক সহজ। তবে যতটুকু নাশকতার আশঙ্কা করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর সক্রিয়তার কারণে তেমনটি এখনো হয়নি- যা আমাদের সৌভাগ্য।

তিনি আরো বলেন, আধুনিক অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার ও হাতবদল মিয়ামনমার সীমান্তে বেশি হলেও দুর্গম এলাক হওয়ায় সীমান্ত ছিদ্র মুক্ত রাখা যায় না। তবে এমন কর্মকাণ্ড বন্ধে সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাটাই এখন বাংলাদেশের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ।

এদিকে কক্সবাজারের ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আমির জাফর বলেন, গ্রেনেডটি দেশের বাইরের মনে হচ্ছে। তবে এতে কোনো দেশের নাম লেখা নেই। গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেনেডটি কারা কেন এনেছে, তা নিয়ে চলছে তদন্ত। হঠাৎ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ চলছে। আরো অনেক বিষয় আছে। তবে ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা তৎপর।

৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর গ্রেনেডটি উদ্ধার করে। তিনি আরো বলেন, গ্রেনেডটি আসলে আহত নবীর ওপর ছোড়া হয়েছে নাকি তিনি নিজে এটি এনে বাড়িতে রেখেছেন সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। হামলাকারীরা কথিত আরসার সদস্য আর নবী হোসেন সেই গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, যার বাসায় গ্রেনেডটি পাওয়া গেছে তাকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যার বাসায় গ্রেনেড, তিনি জানবেন না- এটা হতে পারে না।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবী আরসার সমর্থক। তার ঘরের কোণায় পাওয়া গেছে আর্জেস গ্রেনেডের মতো দেখতে অবিস্ফোরিত অত্যাধুনিক গ্রেনেডটি। গ্রেনেডটি কীভাবে রোহিঙ্গা বসতিতে এলো, তার রহস্য উদ্ঘাটনে অনুসন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে করা মামলাটিতে এজাহারনামীয় আসামি ৩৪ জন এবং আরো ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের তথ্যমতে, চার মাসে উখিয়ার একাধিক আশ্রয় শিবিরে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৪ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন রোহিঙ্গা মাঝি ও পাঁচজন

আরসার সদস্য। বাকিরা সাধারণ রোহিঙ্গা। নিহত মাঝিরা নবী হোসেন গ্রুপের সমর্থক। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে চার মাস ধরে প্রায়ই স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হচ্ছে। এসব সংঘর্ষে এ ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার হয়ে আসছে। আশ্রয় শিবিরে ইয়াবা ও আইস চোরাচালানের অন্যতম হোতা নবী গ্রুপের প্রধান নবী হোসেন উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে গ্রেনেডসহ ভারী অস্ত্রের মজুত ঘটিয়ে থাকতে পারেন। মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) ঠেকানো এর উদ্দেশ্য হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ৮ এপিবিএনের অধীনে উখিয়ার ১১টি আশ্রয় শিবির ও ১৪ এপিবিএনের অধীনে ১৫টি। এই ২৬ আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা আছে সোয়া ৯ লাখ। টেকনাফের সাতটি আশ্রয় শিবিরে থাকে সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ৭ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে কথিত আরসা সদস্যদের ১০-১২ জনের একটি দল উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ ইস্ট এর বি/৩৯ এলাকায় প্রবেশ করে ৫-৭ রাউন্ড গুলি করে। এতে রোহিঙ্গা মোহম্মদ নবী গুলিবিদ্ধ হন। এপিবিএন সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আহত নবীকে উদ্ধার করে। তার ঘরে গ্রেনেড পাওয়া যায়। ঘটনার দুদিন পর রবিবার রাতে উখিয়া থানায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী নবী হোসেন গ্রুপের প্রধান নবী হোসেনকে (৪৫) আসামি করে মামলা করে এপিবিএন। বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে করা মামলাটিতে এজাহারনামীয় আসামি ৩৪ জন এবং আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবীকে ৩ নম্বর এবং মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মির’ (আরসা) প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে (৪৮) ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এজাহারে জুনুনির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখা। আশ্রয় শিবিরে মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা নবী হোসেনের ঠিকানা দেখানো হয়েছে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-৪১ ব্লক। তার বাবার নাম মোস্তাক আহমদ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052049160003662