লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে কেনাকাটায় অনিয়মের সত্যতা মেলেনি : দুদক

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইন্টারনেট রাউটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ একটি রাউটার কিনতে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে কেনাকাটায় অনিয়মে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে দুদক। 

গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায় দুদকের চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। ওইদিন রাতেই কমিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি বলে জানায় কমিশন।

দুদক বলছে, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকে চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় দুদক টিম ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ই-জিপি সংক্রান্ত যাবতীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে। দুদক টিম ওই প্রতিষ্ঠানের ল্যাব  ও স্টোররুম পরিদর্শন করে। অভিযানে ক্রয়কৃত ইকুয়েপমেন্ট স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়ায় অভিযোগের আপাত সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন অতিদ্রুত কমিশন বরাবর দাখিল করা হবে।

দুদক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেবো।

জানা গেছে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির কেনাকাটা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিলো। লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম কেনাকাটায় অনিয়ম করেছেন। যেকোনো ব্র্যান্ডের সাধারণ একটি রাউটারের মূল্য ৫ থেকে সাত হাজার টাকা হলেও তার মূল্য ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, অপটিকাল ফাইবারের ক্রয় মূল্য ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, চারটি ডিজিটাল ওয়েটবোর্ডের মূল্য ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ১২টি কম্পিউটারের মূল্য ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, প্রিন্টারের মূল্য ৬০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছিলো বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিলো। টেন্ডারে অংশ নেয়া ঠিকাদাররা অভিযোগ তুলেছিলেন, গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেন্ডারে আহ্বানকৃত কাজগুলো সর্বনিম্ন ঠিকাদারকে না দিয়ে উচ্চ দরদাতাকে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি শিক্ষা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘পলিটেকনিকের একটি রাউটার কিনেছে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে, তদন্তে দুদক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে, অভিযান শেষে দুদক জানায়, প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। এরপর প্রকাশিত রিপোর্টের প্রতিবাদ জানান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। 

লিখিত প্রতিবাদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেন্ডারে ভাগবাটোয়ারা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদ আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদে বিকৃতভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে এবং প্রকাশিত তথ্য সঠিক নয়। প্রকাশিত সংবাদের রাউটারটি সাধারণ মানের রাউটার নয়। এটি একটি নেটওয়ার্ক সুইচ রাউটার। এর আনুমানিক মূল্য এক লাখ টাকার বেশি। আর্কিটেকচার বা ক্যাড লাবের জন্য কেনা কম্পিউটারটির আনুমানিক বাজার মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকাশিত সংবাদে ডিজিটাল ওয়েটবোর্ড উল্লেখ করা হয়েছে বাস্তবে তা ছিলো ডিজিটাল ইন্টারেকটিভ হোয়াইট বোর্ড। সরবরাহকৃত বোর্ডের প্রতিটির বর্তমান বাজারদর ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকাশিত সংবাদে শুধু অপটিক্যাল ফাইবারের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে আহ্বানকৃত ও সরবরাহকৃত আইটেমটি হলো অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন সিস্টেম ট্রেইনার, যার বর্তমান বাজার দর আহ্বানকৃত বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরবরাহকৃত প্রিন্টারটির বর্তমান বাজার দর ৬২ হাজার ১৫০ টাকা।

তিনি আরো জানান, অভিযোগকারী দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাইসা ট্রেডার্স ও মেসার্স রাজু এন্টারপ্রাইজ অভিজ্ঞতার সনদসহ অনেক ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে এবং পিপিআর-২০০৮ অনুসারে ইজিপি টেন্ডারিং সিস্টেমে চাওয়া ব্র্যান্ড ও মডেল ও কান্ট্রি অব অরিজিন হিসেবে সাবমিট করেননি বা কিছু লটে সাবমিট করলেও মূল্যায়নের সময় দেখা যায়, তা যথাযথ নয়। অনেক ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত ব্র্যান্ড এবং মডেল সাবমিট করেন। তাছাড়া ব্র্যান্ড-মডেলের বা স্পেসিফিকেশনের স্থানে কোথাও টু বি মেনশনড বাই বিডার, আবার কোথাও ‘বাড়ির ঠিকানা’ বা বইয়ের আইএসবিএন নম্বর, কোথাও ‘কম্পিউটারের পরিবর্তে প্রিন্টারের স্পেসিফিকেশন’ সাবমিট করেন। এসব কারণে ওই দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নন-রেসপন্সিভ হয়। নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার না পেয়ে তারা পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মূলত টেন্ডার ভাগাভাগি করার কোনো সুযোগ নেই। ই-জিপির মাধ্যমে আহ্বান করা টেন্ডারগুলো পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী মূল্যায়ন করে যোগ্যতাসম্পন্ন (Eligible and Responsive) সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ঠিকাদারদের একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুল তথ্য উপস্থাপন করে টেন্ডার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এর আগে একই বিষয়ে তারা লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ এবং টেন্ডার পাওয়া জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। উচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। 

প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, মেসার্স রাইসা ট্রেডার্স ও মেসার্স রাজু এন্টারপ্রাইজ ই-জিপি সিস্টেমে ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদসহ বিভিন্ন প্রতারণামূলক ডকুমেন্টস সাবমিট করায় গত ৩ আগস্ট তাদেরকে ই-জিপি সিস্টেমের মাধ্যমে কারণ দর্শানো হয় এবং তারা ভুল স্বীকার করে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাওয়ায় তাদেরকে মানবিক দিক বিবেচনা করে ক্ষমা করে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, অভিযোগকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুদকের চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সমন্বিত আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি টিম প্রতিষ্ঠানে তদন্তে আসে। এতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে দুদকের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে (Anti-Corruption Commission- Bangladesh) তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এরপরও স্বার্থান্বেষী ওই মহলটি সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেন। এতে প্রশাসনসহ জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ওই সংবাদে উল্লেখ করা তথ্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নর পাশাপাশি আমাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038430690765381