দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিতলালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের নামে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ

বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন |

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ

  দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় গত ৩০ নভেম্বর “বিধি ভেঙ্গে দুই জায়গার বেতন ভাতা নিচ্ছেন অধ্যক্ষ রফিকুল” শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের প্রতি আমি, নিম্ম স্বাক্ষরকারী অধ্যক্ষ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ এর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে একাংশে লেখা হয়েছে যে, জুলাই ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি আমি লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর অর্থাৎ দুই জায়গা থেকে বেতন ভাতা গ্রহণ করছি। অভিযোগে বলা হয়েছে ২০১২ সালের ৯ জুলাই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর কলেজের বাসায় বসবাস করলেও আমি বাড়ি ভাড়া ভাতা গ্রহণ করে যাচ্ছি। আরো বলা হয়েছে “প্রতি বছর নিজের আয় করের ১১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কলেজ তহবিল থেকে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৯ বছরে আয়কর বাবদ মোট ৯১ লাখ ২৯ হাজার ৩২৫ টাকা আয়কর কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়েছে।”

         উপরোক্ত অভিযোগগুলো অসত্য, বানোয়াট ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ আমি জুলাই ২০১২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত প্রেষণে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে বেতন ও ভাতা গ্রহণ করি। পরবর্তীতে লিয়েন থাকাকালীনও কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও চুক্তি মোতাবেক লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকেই বেতন ও ভাতা গ্রহণ করি। অতঃপর ২০ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. থেকে আমাকে পুনরায় প্রেষনে পদায়ন করা হলে এ সময়ে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের ন্যায় আমার আবাসিক সুবিধা থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস থেকে আইবাসপ্লাসপ্লাস এর মাধ্যমে আমার বাড়ী ভাড়া ভাতা বাদ দিয়ে বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। এ সময়েও আমি কলেজ থেকে বেতন কিংবা বাড়ি ভাড়া ভাতা বাবদ কোন টাকা গ্রহণ করিনি। কিন্তু প্রায় অর্ধশত বছর পূর্বে নির্মিত অধ্যক্ষের বাস ভবনটি বারবার মেরামত করা সত্ত্বেও বাড়িটি বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়ায় ২৬.০৯.২০২০ খ্রি: তারিখে পরিচালনা পরিষদের সভায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করার জন্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে পত্র প্রদান করা হয় এবং উক্ত ভবনটি পুনঃনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত অধ্যক্ষকে বাহিরে বসবাসের জন্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদায়নের আদেশ মোতাবেক পদের সাথে সংশ্লিষ্ট  আবাসিক সুযোগ সুবিধা বাবদ থোক দেড় লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তখন করোনা পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষনিকভাবে আমি উক্ত বাসা থেকে নেমে যেতে পারি নি এবং কলেজ তহবিল থেকে আবাসিক সুবিধা বাবদ কোন অর্থও গ্রহণ করিনি। পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ায় ডিসেম্বর ২০২০ থেকে আমি উক্ত বাসা ছেড়ে বাহিরে অবস্থান করি এবং ঐ সময় থেকে পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজ থেকে  আমার আবাসিক সুবিধা বাবদ মাসিক দেড় লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ডিসেম্বর ২০২০ থেকে কলেজ তহবিল থেকে আমাকে আবাসিক সুবিধা প্রদান করা হলেও একই সুবিধা অর্থাৎ আমার বাড়িভাড়া ভাতা আমি সরকারের আইবাসপ্লাসপ্লাস থেকে গ্রহণ করছি না। সুতরাং ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি এই দীর্ঘ সময় ধরে দুই জায়গায় থেকে বেতন ভাতা গ্রহণের অভিযোগটি মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।   

আমার আয়কর সম্পর্কিত বক্তব্যটিও সত্য নয়। কারণ আমার লিয়েনে নিয়োগের চুক্তি ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমার ট্যাক্স ভ্যাট, পেনশন চাঁদা, লীভ স্যালারী ইত্যাদি কলেজ কর্তৃপক্ষ বহণ করবে। সে মোতাবেক ২০১৭-২০১৮ করবর্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার আয়কর পরিশোধ করছে। বিগত ৫ বছরে যার পরিমান ৯১,২৯,৩২৫/- টাকার চেয়ে অনেক কম। সুতরাং প্রতি বছর নিজের আয়করের ১১,৭৪,০০০/- টাকা হারে ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৯ বছরে আয়কর বাবদ মোট ৯১,২৯,৩২৫/- টাকা আয়কর কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়েছে বলে আনীত অভিযোগটিও ভিত্তিহীন। প্রকাশিত সংবাদে আইবাসপ্লাসপ্লাস থেকে মাসিক বেতন গ্রহণ করার পরও কলেজ থেকে মাসিক ১,৫০,০০০/- টাকা ভাতা ও বেতন বাবদ ২,৫০,০০০/- গ্রহণ করছেন মর্মে অভিযোগটিও অসত্য।

         পরীক্ষার সম্মানী নিয়ে যে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে তাও অসত্য। কারণ ৩০ জুন ২০২০ তারিখে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাখাতে সারা বছরে সর্বমোট প্রাপ্তি দেখানো হয়েছে ১৭,০৯,০৩৩/- টাকা। আবার বহি: পরীক্ষাখাতে প্রাপ্তি দেখানো হয়েছে ১৪,৪০,০০০/- টাকা। যা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। কারণ ঐ সময়ে উক্ত খাতে প্রকৃতি প্রাপ্তি অনেক গুণ কম। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আলাদা কোন বিলের মাধ্যমে অধ্যক্ষকে পরীক্ষার কোন সম্মানী দেওয়া হয় না। পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত কলেজের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা খাতের সম্মানী অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, কমিটি, শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করে পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন ক্রমে ব্যাংক এ্যাডভাইজ এর মাধ্যমে নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়। এখানে অধ্যক্ষের ইচ্ছামত কোন অর্থ গ্রহণের সুযোগ নেই।

   আরো লেখা হয়েছে যে, আমি করোনা চিকিৎসা বাবদ ৪,১০,০০০/- টাকা আত্মসাৎ করেছি। এটি শুধু অসত্যই নয় আমি এর তীব্র নিন্দাও জানাচ্ছি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সরকারিকরণের জন্য ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রি. তারিখে কলেজের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের নিকট হস্তান্তর এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসে। তখন দেখা যায় যে, অত্র কলেজের ভোগদখলকৃত ৩.০২ একর জমির মালিক জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের জমির বকেয়া কিস্তি বাবদ পাওনা ১,৯৩,৫৫৭/- টাকার বর্তমান মূল্য ও হস্তান্তর ফি বাবদ প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ধার্য করা হয়। অতঃপর ২০২০-২০২১ সালের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ সময়ে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও মন্ত্রণালযের বহুবার ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে তাদের চাহিত সকল তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করে প্রায় দের বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুমোদনের মাধ্যমে উক্ত জমি কলেজের নামে মাত্র ১০০১/- টাকায় দলিল সম্পাদিত হয়। কলেজের এ বিশাল অর্জনের ক্ষেত্রে কলেজের মাননীয় সভাপতি অ্যডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ, মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি, মাননীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দের সহযোগিতা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষভাবে কলেজের জমি সংক্রান্ত কোন নথিপত্র যখন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং মন্ত্রণালয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন দেশের খ্যাতনামা একজন সাংবাদিকের অবদান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সহযোগিতায় আমি তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট স. ম. রেজাউল মহোদয়ের সাথে তার বাসায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছিলাম এবং তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ  পেয়েছিলাম।

উল্লেখ্য, করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে এ সকল কাজ করতে গিয়ে আমিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি এবং অবস্থা খারাপ হলে স্কায়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৯ দিন চিকিৎসা শেষে মহান রব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে জীবন ফিরে পাই। এ প্রেক্ষিতে পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আমর হাসপাতালের ৪,২০,০০০ টাকার বিলটি পরিশোধ করা হয়। উল্লেখ্য যে, করোনাকালীন সময়ে কলেজের উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য অফিস সহকর্মীদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়েছিলেন তাদেরকে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুদান প্রদান করেন। উপাধ্যক্ষের হাসপাতালের বিলও কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে। তাছাড়া একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম শ্রেণির ফ্রি চিকিৎসা পাওয়ার প্রাধিকার আমার রয়েছে। সরকারি কল্যাণ তহবিল থেকে উক্ত বিল দাখিল করে অর্থ প্রাপ্তির অধিকারও আমার ছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার চিকিৎসা বিলটি পরিশোধ করায় আমি সরকারের কাছ থেকে উক্ত বিল বাবদ কোন টাকা দাবী করিনি। আরো উল্লেখ্য যে, করোনাকালীন যারা অফিসে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে একটি ভাতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আমি তা গ্রহণ করিনি। সুতরাং এখানে অর্থ আত্মসাৎ এর কোন প্রশ্নই উঠে না। বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আমার জন্য চরম মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

অভিযোগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের, স্ত্রী ও মেয়ের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত অঢেল সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে যা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। কারণ আমাদের সকল আয় ও সম্পদ যথাযথভাবে আমার ও আমার স্ত্রীর আয়কর রির্টানে প্রদর্শিত আছে।  আয়কর রিটার্ণের বাহিরে আমাদের কোন সম্পদ নেই। অতএব জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুর্নীতির এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রনোদিত।  আমার স্ত্রীর আয়কর রির্টানে খোলার বিষয় নিয়েও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক এটি তাঁর নাগরিক অধিকার। লালমাটিয়া মহিলা কলেজে আমার পদায়নের বহুকাল পূর্বে তিনি যখন এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, ঢাকা এবং তৎপরবর্তী ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষক ছিলেন তখন থেকেই তাঁর আয়কর রির্টার্ন দাখিল করা হয়।

  প্রতিবেদনে ২০২০-২০২১ করবর্ষে শুধু বেতন বাবদ ৯২,০২,৩৫১/-টাকা আয় দেখানো হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। যা একেবারেই অসত্য। কারণ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যখন নিয়োগকৃত ব্যক্তির ভ্যাট, ট্যাক্স, কর ও অন্যান্য সরকারি পাওনা পরিশোধ করেন তখন নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে উক্ত সমুদয় অর্থকে তার রির্টানে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। এছাড়া অন্যান্য খাতের প্রাপ্তিকেও রির্টানে উল্লেখ করতে হয়। সুতরাং রির্টানে প্রদর্শিত সমুদয় অর্থ শুধুমাত্র বেতন খাত থেকে নেওয়া হয়েছে বলে প্রকাশিত অভিযোগটও সত্য নয়। এছাড়াও ২০২১-২০২২ করবর্ষে প্রকাশিত নগদ তহবিলের পরিমাণটি সঠিক থাকলেও মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৩,৯০,০৫,১৯১/- টাকা যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে এই পরিমাণটি অনেক বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। এছাড়া আমার ইন্দিরা রোডে আমার ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটটি ২০০০ বর্গফুটের আড়াই কোটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ আমি আমার আয়কর নথিতে কোন তথ্যই গোপন করিনি। এছাড়াও উক্ত ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট গ্রহণ করা হয়েছে আনিত অভিযোগটিও সঠিক নয়। কারণ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের শর্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় কোন তথ্যই গোপন করা হয়নি। যারা সব সময় মিথ্যাকে নিয়েই চলে এবং মিথ্যা ও হঠকারিতা যাদের ভিত্তি তারা এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারে।

এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারিকরণের প্রক্রিয়াধীন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের নিবন্ধনহীন ৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগটিও মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। এ সময়ে নতুন করে একজন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার একক ক্ষমতা অধ্যক্ষের থাকে না। এখানে উল্লেখ্য, আমার যোগদান পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি স্বাভাবিক অবসরে যাওয়া ৪৬ জন সিনিয়র শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে একজন নিয়মিত শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়নি।

বিগত ৯ বছর ধরে শিক্ষকদের ইক্রিমেন্ট বন্ধ রেখে তাদের ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে বাড়ী ভাড়া ভাতা প্রদানের অভিযোগটিও সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। কারণ ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের সময়ে পূর্ববর্তী সময়ের সকল ইনক্রিমেন্ট যোগ করে বেতন ও ভাতা নির্ধারণ করা হয় এবং উক্ত নির্ধারিত বেতনের উপরই বাড়ী ভাড়া ভাতা প্রদান করা হয়। আমি যোগদানের পূর্ববর্তী কয়েক বছর অর্থাভাবে শিক্ষকদের গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা করাসহ শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ ছিল। আমি যোগদানের পর কলেজের শিক্ষার্থী বৃদ্ধিসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসলে নীতিমালা করে পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পূনরায় এ সকল সুবিধাদি চালু করা হয়।

অধ্যক্ষ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ সম্পর্কে লেখা হয়েছে ‘‘তিনি ২০১২ সালের ৯ জুলাই থেকে কখনো প্রেষণে কখনো লিয়নে (পদাধিকার ছুটি) লালমাটিয়া মহিলা কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদের অন্য অংশে লেখা হয়েছে যে, ৫ বছরের বেশী সময় নিজ সার্ভিসের বাহিরে থাকার বিধান নাই। বিধান আছে কি নেই সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ভাল বলতে পারবেন।

কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদার প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে প্রেষণে অত্র কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন করা হলে আমি ১২ জুলাই ২০১২ খ্রি: তারিখে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করি।

  আমার যোগদানের প্রথম মাসে কলেজের সাধারণ তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় হোস্টেল তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা ধার করে শিক্ষক কর্মকারীদের বেতন দেওয়া হয়ে ছিল। অতঃপর আমি এবং কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে কলেজের অধিভুক্তি ফিরে পাই।

আমার ঐকান্তিক চেষ্টা ও সহকর্মীদের সহযোগীতায় ২০১৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কলেজ পারফরমেন্স র‌্যংকিং-এ লালমাটিয়া মহিলা কলেজ জাতীয় পর্যায়ে সেরা ১০ কলেজের তালিকাভুক্ত হয় এবং মহিলা কলেজের মধ্যে সরকারি ইডেন কলেজ প্রথম ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজ দ্বিতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করে। কলেজে তহবিলের পরিমাণ দাড়ায় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। ২০১২ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের বেতন ও সেশন চার্জ না বাড়িয়ে এ জাতীয় সফলতার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে লিয়েনে আনার প্রস্তাব দেন। তার পরপর আমিও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগদান করি। কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমার লিয়েন মঞ্জুর করলে আমি পূনরায় অত্র কলেজে যোগদান করি। অতঃপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০১৯ সালের কলেজ পারফরমেন্স র‌্যাংকিং-এ লালমাটিয়া মহিলা কলেজ জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ ও মডেল কলেজ হিসেবে স্বীকৃত লাভ করে।

লিয়েন শেষে আমি মাউশি অধিদপ্তরে যোগদান করলে ২০ অক্টোবর ২০২০ সাল থেকে পুনরায় আমাকে প্রেষণে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কলেজটি সরকারিকরণের নিমিত্তে বিগত ০৪.১০.২০২১ খ্রি: তারিখে সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের বরাবর হস্তান্তরের জন্য যে দলিল সম্পাদন করা হয় সেখানে কলেজের বর্তমান তহবিল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ৮২ কোটি টাকা। সুতরাং আমি কিংবা আমার পরিচালনা পরিষদ যদি দুর্নীতিবাজ হতাম তা হলে কখনোই এ অর্জন হতো না।  

এ কলেজের একজন প্রভাবশালী শিক্ষকের বোন শিক্ষা সনদের ফলাফল গোপন করে চাকুরি করে যাচ্ছিলেন। সরকারিকরণের নিমিত্তে পরিদর্শনের সময়ে বিষয়টি ধরা পড়ার পর তার চাকুরি চলে যায়। পরবর্তীতে উক্ত প্রভাবশালী শিক্ষক বর্তমান প্রশাসনের সাথে একাধিক ষড়যন্ত্র করে যা কর্তৃপক্ষীয় তদন্তে প্রমানিত হয় এবং তাকে পরিচালনা পরিষদের শিক্ষক প্রতিনিধির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কলেজের স্বার্থে বিধি শৃঙ্খলা পরিপন্থি আচরণের জন্য বর্তমান প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে এবং বিধিগতভাবে কঠিন অবস্থানে থাকতে হয়। সুতরাং ৬০ শতাংশ শিক্ষকের কাছ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ বন্ধ করতে হুমকী দিয়ে মুচলেকা গ্রহণের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

        

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আমার যোগদানের পরপরই চাকুরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত জনৈক শিক্ষকের স্থলে ২০১৪ সালে আব্দুর রাজ্জাককে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাদের উভয়ের বাড়ি একই এলাকায়। চাকুরিতে ঢুকেই আব্দুর রাজ্জাক বিভাগীয় শিক্ষকসহ অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে শৃঙ্খলা পরিপন্থি আচরণ করতে শুরু করেন। কয়েকবার বিভাগীয় প্রধানসহ বিভাগীয় শিক্ষকদের সাথে বসে আব্দুর রাজ্জাককে মৌখিকভাবে সকর্ত করা হয়। কিন্তু কোন ভাবেই সে যখন নির্দেশনা মানছিল না। তখন তাকে চাকুরি থেকে কেন বরখাস্ত করা হবে মর্মে  বিগত ১৯.০৪.২০১৬ খ্রি: তারিখে কারণ দর্শানো হয়। তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করায় বিষয়টি তখন নিস্পত্তি করা হয়। আব্দুর রাজ্জাক এই কলেজে চাকুরির আবেদনের সময় দাখিলকৃত জীবন বৃন্তান্তে সিঙ্গেল শব্দটি ব্যবহার করায় সাক্ষাতকার বোর্ডে তাকে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি অবিবাহিত বলে জানান। তাই এ কলেজে অবিবাহিত শিক্ষক হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। কিছু দিন পর তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে চাকুরি পেয়ে অন্যত্র চলে গেলে জানা যায় যে, তিনি পূর্বের বিয়ের তথ্য গোপন করে এ কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে বিয়ে করেন। রাজ্জাকের বর্তমান স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে মামলা করলে একসময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রাজ্জাক সাময়িক বরখাস্ত হন। এর পরপরই রাজ্জাক মাউশির মহাপরিচালকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন। যা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় ও পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও রাজ্জাক ঢাকার গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ, আদমজি ক্যান্টমেন্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ, নোয়াখালি সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। যা ডিবির তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে বলে তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়। রাজ্জাক লালামাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে চলে যাবার পর  একদিন আমাকে ফোন করে এ কলেজে গেস্ট টিচার হিসেবে ক্লাস চান। কিন্তু তার আচরণগত কারণে আমি ক্লাস দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। তারপর থেকে রাজ্জাক এ কলেজকে নিয়ে এবং আমাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আর ফেইসবুক আইডিতে মানহানিকর মিথ্য পোস্ট দিয়ে আসছে।

সর্বশেষ বিগত ২৩.১০.২০২১ খ্রি: তারিখ তাকে হত্যা করা হলে মাউশির বর্তমান মহাপরিচালকসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা দায়ি থাকবেন উল্লেখ করে তার ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। যাদের সঙ্গে আমার নামও ছিলো।  ফলে মহাপরিচালকসহ আমরা থানায় জিডি করতে বাধ্য হই। আমরা তদন্তপূর্বক এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবী জানাই। বিষটি বর্তমানে তদন্তাধীন।  রাজ্জাকের সাথে ঐ স্বার্থান্বেষী মহল যাদের নিকটআত্মীয় শিক্ষা সনদের তথ্য গোপন করে চাকুরি নিয়েছিল এবং সরকারিকরণের পরিদর্শনের সময়ে ধরা পড়ার পর চাকুরি চলে যায় এবং কলেজটি সরকারি হলে তিনি সহযোগি অধ্যাপক থেকে প্রভাষক হবেন, বেতন কমে যাবে বহুগুণ তারা যুক্ত হয়ে কলেজের অগ্রযাত্রা এবং সরকারের কার্যক্রম বাস্তবায়নে আমাকে বাধাগ্রস্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এরূপ মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছেন।

সুতরাং অভিযোগ যাচাই-বাছাই না করে উপরোক্ত মিথ্যা সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত,  পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করাসহ স্বনামধন্য কলেজের  অধ্যক্ষ পদের  ব্যাপকভাবে সুনামহানি করা হয়েছে। এছাড়াও আমার আয়কর সম্পর্কিত কিছু তথ্য ও উপাত্ত জন সম্মুখে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। সুতরাং আমার এই প্রতিবাদলিপি আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করে দায়িত্বশীলদের দৈনিক ‘দেশ রূপান্তর’ যথাযথ দায়িত্বশীল আচরণ করবেন বলে আশা করছি। অন্যথায় আমি এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবো।

 

                                                                    অধ্যাপক মো: রফিকুল ইসলাম পিএইচডি

                                                                                 অধ্যক্ষ

                                                                        লালমাটিয়া মহিলা কলেজ

                                                                       লালমাটিয়া, ঢাকা-১২০৭।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069859027862549