শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, লাশের রাজনীতিকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করবো। লাশের রাজনীতিকে আর প্রশয় দেবো না। আর সহ্য করবো না।
গতকাল বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত বিউপি শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর উত্তরার বাসায় গিয়ে তার বাবা ও ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের সান্তনা জানিয়ে ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় মুগ্ধকে সূর্যসন্তান অভিহিত করে তার মেধার ভূয়সী প্রশংসা করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, চলমান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাটা চালানো এখন অন্যতম লক্ষ্য। আমরা সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কি আবারো সেরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়তে চাই যেখানে একটা সন্দেহ এসেছে বা প্রমাণও আছে ঢাকার বাইরে থেকে এসে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছে, ওইরকম পরিস্থিতি আবারো সৃষ্টি হোক সেটা তো আমরা কেউই চাই না। সুতরাং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথাটি ভেবে, যারা জন নিরাপত্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলছি।
মন্ত্রী বলেন, আমরা অবশ্যই চাই অতি দ্রুত আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত হোক। সবাই যাতে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে সহাবন্থান করতে পারে সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতায় মোট কতজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পুরো সংখাটা সংগ্রহ করার কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না। কারো মৃত্যুর খবর প্রচার হওয়ার পর দেখা গেছে, যার কথা বলা হচ্ছে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলছেন, বেঁচে আছি। তাই তালিকাটা করতে সময় লাগছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই কোটা আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর উত্তরায় মারা যান মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী।
গুলিতে মুগ্ধের যখন মৃত্যু হয় তার কিছুক্ষণ আগেও তাকে হাসিমুখে আন্দোলনকারী সহপাঠীদের হাতে পানি ও বিস্কুট তুলে দিতে দেখা যায়। বিক্ষোভ মিছিলের উত্তাল সেই সময়েও তার মুখ থেকে হাসি আড়াল হয়নি।
মুগ্ধর জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩৮ সেকেন্ডের একটা ভিডিয়ো শেয়ার করেন। তাতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে শেষ মিছিলেও মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের হাতে ওয়াটারকেস থেকে পানি তুলে দিচ্ছেন। তাকে বারবার বলতে শোনা যায়, 'এই পানি লাগবে পানি'। এ সময় সবুজ ফিতায় বুকে ঝুলছিল তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র।
মুগ্ধর বাসায় যাওয়ার সময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার চাপা।
মুগ্ধ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরো বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের আসলে বলার মত ভাষা নেই, একটা সোনার টুকরো ছেলে ছিলো। সে অরাজনৈতিক ছিলো। মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কার পেয়েছিলেন। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে আছি। তার পরিবারের যে বেদনা, তার প্রতিবেশীদের, তার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের যে বেদনা সেই বেদনার সাথে আমাদের একাত্মতা।সে আমাদের সন্তান ছিলো। এই ভয়াবহ নৃশংসতার বিচার আমরা চাই। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করছি। আমাদের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।