নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রাম বর্তমান পৌরসভার ভওয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ উল্লাহ। এক সময় পেটেভাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বর্তমানে সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অস্থায়ী পিয়ন। ১০ হাজার একশ ৬১ টাকা বেতনে চাকরি করে তিনি এখন শত কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। তার বাবা ইফসুফ মোল্যাও নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পিয়নের চাকরি করতেন।
পিয়নের চাকরি করে মোহাম্মদ উল্লাহ নড়াইল শহরের ভওয়াখালীতে ১০ শতক জমির ওপর তিনতলা আলিশান বাড়ি করছেন। প্রতিটি কক্ষ বিলাসবহুল ডেকোরেশন করা হয়েছে। শহরের রূপগঞ্জ বাজারসহ পৌরসভার বিভিন্ন মৌজায় নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। মোহাম্মদ উল্লাহর হাল রেকর্ডে (আরএস) কুড়িগ্রাম মৌজার মেইন সড়কের পাশে, রূপগঞ্জ বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি খাস খতিয়ানের প্রায় ২ একর জমি নিজ নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।
ব্যক্তিমালিকানা জমিও রেকর্ড করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, পিয়ন পদে চাকরি করলেও সেটেলমেন্ট অফিসের দালালিই মোহাম্মদ উল্লাহর মূল পেশা। নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, শহরের সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের নিয়ে গড়ে তুলেছে দুর্নীতির বিশাল সিন্ডিকেট। নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম মৌজার হাল (আরএস) রেকর্ডে ৪৬৫ ও ১৫৫নং খতিয়ানে সাবেক (এসএ) ২৪৮, ২৪৯ ও ২৪৭ নং দাগসহ আরও অন্তত ১৭টি দাগে ৩ একরের বেশি সরকারি ও ব্যক্তি নামীয় জমি ভওয়াখালী গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহ এবং কুড়িগ্রামের সন্তোষ কুমার আচার্যের মেয়ে যুথিকা রানী মজুমদারসহ ভূমিদস্যুদের নামে রেকর্ড হয়েছে।
inside-ad]কিন্তু নড়াইল পৌর ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম মৌজায় এসএ ২৪৭ ও ২৪৮, ২৪৯ দাগের ৩৩ শতক জমি সরকারি ‘ক’ তফশিলভুক্ত এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে রেকর্ড রয়েছে। শুধু তাই নয়, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুন্সী হাফিজুর রহমানের জমিও মোহাম্মদ উল্লাহর নামে রেকর্ড হয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। নড়াইল পৌর ভূমি অফিসের তহশিলদার (উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা) মোস্তাফিজুর রহমান মিলন বলেন, ‘সরকারি জমির হাল (আরএস) পর্চাসহ অন্যান্য তথ্যের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।[
ফাইনাল প্রিন্ট পর্চা পেলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে যে, এ চক্র কী পরিমাণ জমি জালিয়াতি করে রেকর্ড করে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. রবিউল ইসলাম জানান, ‘ইতোমধ্যে তাকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমানে নিয়মিত কলেজে আসছেন।’ নড়াইল সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম হাসান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা আমাকে জানালে তাদের জমি রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা দেব।’
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘সরকারি খাস খতিয়ানের জমি রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। সরকারি জমি আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।’ তবে মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জালিয়াতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কুড়িগ্রামের অয়ন রঞ্জন দাসসহ নড়াইলের অনেকেই এভাবে জমি জালিয়াতি করে নিয়েছে। জমিদারদের বিপুল পরিমাণ জমি জালিয়াতি হয়েছে। সেসব জমি উদ্ধারে কারও কোনো তৎপরতা নেই। অথচ আমার সামান্য জমি নিয়ে সবাই বাড়াবাড়ি করছে। বেশি ঝামেলা হলে জমি ছেড়ে দেব।’