শতভাগ পাস তিন কলেজে শিক্ষার্থী মাত্র একজন করে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত রোববার ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এদিন বেলা ১১টার কিছু আগে কম্পিউটারে বাটন চেপে ফলাফল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১১ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। ঢাকা মহানগরীর মধ্যে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২টি। শতভাগ পাস করা এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র একজন করে শিক্ষার্থী।

প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো—রাজধানীর মিরপুর–১-এর খান ইন্টারন্যাশনাল কলেজ (EIIN: 131971), বনশ্রীর সেন্ট্রাল আইডিয়াল কলেজ (EIIN: 130930) ও মিরপুর–১০-এর নর্থ সিটি কলেজ (EIIN: 137099)। এমন ফলের ব্যাপারে জানতে কলেজ তিনটিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।

নর্থ সিটি কলেজের ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে ফোন করা হলে ফোন ধরেন উপাধ্যক্ষ জাহিদ হোসেন সিকদার। কলেজের এমন ফলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, যে একজন এবার পাস করেছেন, তিনি মূলত ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থী। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল মোট ১৫ জন, যাঁদের মধ্যে ১৪ জন পাস করলেও একজন পাস করতে পারেননি। যে একজন পাস করতে পারেননি, তিনি এবার ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে আবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন। সে বছর কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিল মোট ছয় শিক্ষার্থী। তবে করোনার কারণে এবং একই ভবনে আরেকটি কলেজ থাকায় শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। 

কলেজটি উত্তরা থেকে স্থান পরিবর্তন করে এখন মিরপুরে নিয়ে আসা হয়েছে এবং নতুন করে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। ফলে এবার একাদশ শ্রেণিতে ব্যবসায় শিক্ষায় ১০ জন, বিজ্ঞানে ৬ জনসহ ১৬ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে; যারা আগামী ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে এই ১৬ শিক্ষার্থীর জন্য পূর্ণকালীন শিক্ষক আছেন ১২ জন। আগামীতে ভালো ফল করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

একজন পরীক্ষার্থী নিয়ে শতভাগ পাস করা আরেকটি প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল আইডিয়াল কলেজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কলেজটিতে টানা তিন বছর ধরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাত্র একজন। ২০২৩ ও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় মাত্র একজন অংশ নিয়ে পাস করেন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে একজন অংশ নিলেও পাস করতে পারেননি। সেন্ট্রাল আইডিয়াল কলেজের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়নি, এমনকি মাউশির ওয়েবসাইট ঘেঁটেও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। সংগৃহীত একটি ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেন কলেজটির সাবেক মালিক পরিচয় দেওয়া নজরুল ইসলাম।

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে নজরুল ইসলাম জানান, কলেজটির মালিকানায় বিগত দু-তিন বছর তিনি থাকলেও এখন আর নেই, তাই ফলাফল নিয়ে কী হচ্ছে, তা তিনি জানেন না। বর্তমানে মালিক কে কিংবা কলেজটির অধ্যক্ষ কে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বনশ্রীর আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্টেলিজেন্টসিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের মালিক এ কলেজটিকে কিনে নিয়েছেন, সেখানে যোগাযোগ করুন।

সেখানে যোগাযোগ করা হলে ইন্টেলিজেন্টসিয়ার অধ্যক্ষ পরিচয় দেওয়া একজন জানান, সেন্ট্রাল আইডিয়াল কলেজে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা গভর্নিং বডি নেই এবং কোনো শিক্ষা কার্যক্রমও হয় না বলে তিনি জানেন, তবে যেহেতু উভয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় একই ব্যক্তিরা যুক্ত আছেন বলে তিনি জানেন, সেহেতু একটি কমিটি থাকার কথা। তাহলে কোনো শিক্ষার্থী না থাকার পরও কীভাবে একজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিল জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

খান ইন্টারন্যাশনাল কলেজে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মো. জসিম উদ্দিন খান জানান, কলেজটি এত দিন ভাড়া বাড়িতে চলছিল। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত কলেজের এমপিও হবে না এমন নির্দেশনার পর আর নতুন করে কোনো শিক্ষার্থীর ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। যে একজন এবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে, সে মূলত গতবার বাংলায় ফেল করেছিল। তাই তাকে এবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজ স্থানান্তরের পর আবার শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী কলেজটি থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ১৫ জন, যাঁর মধ্যে ১৪ জন পাস করে গেলেও একজন পাস করতে পারেননি এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ জনের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই পাস করেছিল। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন ৮১ জন, যাঁদের সবাই পাস করেন।

সূত্র : প্রথম আলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028948783874512