শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীর অকাল মৃত্যু প্রসঙ্গে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পেনশন মানেই সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর মাসিক বৃত্তি। এ মাসিক বৃত্তি নির্ভর করে চাকরির শেষ বেতনের পরিমাণের ওপর। তবে সময়ে সময়ে নিয়ম পালটেছে। শেষ বেতনের একাংশের ভিত্তিতে গ্র্যাচুইটি আর বাকি অংশ দেওয়া হয় মাসিক পেনশন হিসাবে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ অবধি শেষ বেতনের ৮০ শতাংশের অর্ধেকের ২০০ গুণ দেওয়া হতো গ্র্যাচুইটি আর বাকি অর্ধেক মাসিক পেনশন। মঙ্গলবার (১১ মে) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।   

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে হঠাৎ করে বদলে গেল রীতি। বলা হলো, একজন অবসরভোগী মাসিক পেনশন নিতে পারবেন; আবার ইচ্ছা করলে মাসিক পেনশন না নিয়ে একযোগে পেনশনের মাসিক টাকার পরিমাণকে ১০০ দিয়ে গুণ করে যত টাকা হয়, তা নিয়ে নিতে পারবেন। যারা পেনশন না নিয়ে একযোগে সাকুল্য টাকা নিয়ে নিলেন; তাদের পরিচিতি হলো শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী।

চলছিল ভালোই। অনেকে শতভাগ সমর্পণ করে খুশি; আবার কেউ কেউ পেনশন নিয়ে তৃপ্ত। তারপর বিশেষ করে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের নতুন বেতন স্কেল হলে দেখা গেল-শতভাগ সমর্পণ করার পরিবর্তে পেনশন নেওয়াই লাভজনক। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের আবেদন-নিবেদনের পর আর প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই থেকে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের অবসরের ১৫ বছর অতিক্রান্ত হলে পেনশন পুনঃস্থাপন করা হয়।

ওই তারিখের পর থেকে শতভাগ পেনশন সমর্পণেরও সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১ জুলাই ২০১৭ থেকে সব সরকারি কর্মচারী ১৯৯৪-এর আগের নিয়মে গ্র্যাচুইটি ও পেনশন পেতে শুরু করেন। পেনশন নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিভেদ দূর হয়ে যায়। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পেনশন পুনঃস্থাপন চালু হওয়ার পর উঠে এলো কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বা তারপরে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারী ২০১৭-এর আগেই মারা গেলে তার পরিবারের কী হবে?

সরকার সমাধান দিল-পেনশন পুনঃস্থাপনের পরে কোনো অবসররত সরকারি কর্মচারী মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী/বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) পুনঃস্থাপিত পেনশন সুবিধা পাবেন। কিন্তু পুনঃস্থাপিত পেনশন সুবিধাপ্রাপ্তির আগেই মারা গেলে সমর্পিত পারিবারিক পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন। অর্থাৎ মাসিক পেনশন ব্যতীত অন্যান্য ভাতা যেমন উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও নববর্ষ ভাতা পাবেন। 

পেনশন পুনঃস্থাপনের আগে অবসরভোগীর মৃত্যু কি তার রেখে যাওয়া পরিবারের কোনো অপরাধের কারণ? অবসরভোগী পেনশন পুনঃস্থাপন পর্যন্ত বেঁচে থাকার পরের মাসেই মারা গেলেও বিধবা স্ত্রী/বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) আজীবন পেনশন পাবেন আর পুনঃস্থাপনের আগে মারা গেলেই যেন বিরাট অপরাধ হয়ে গেল। বিধবা স্ত্রী/বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) তাদের প্রতি রাষ্ট্রের আর কোনো দায় রইল না।

শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পেনশন পুনঃস্থাপন সরকারের একটি বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। এ বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তের সুবিধা থেকে সামান্য একটা অংশকে বঞ্চিত করার কোনোই যুক্তি নেই। অবসরের ১৫ বছর পরে একজন জীবিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পেনশন যেমনভাবে পুনঃস্থাপিত হয়, তেমনিভাবে মৃত কর্মচারীর বিধবা স্ত্রী/বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) তাদের অনুকূলে পেনশন পুনঃস্থাপিত হলে অনেক অকালপ্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পরিবার-পরিজনের মনে স্বস্তি ফিরে আসবে।

কোনো সরকারি কর্মচারী চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে বিধবা স্ত্রী/বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পাওয়ার অধিকারী হবেন। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরের ১৫ বছর পর মারা গেলেও তারা আজীবন পেনশন পাওয়ার অধিকারী হবেন।

তবে শুধু অবসরের পর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মারা গেলেই যত সমস্যা, উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত হবেন পেনশন থেকে, যেন করে ফেলেছেন কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারও অকালে মরে যাওয়াটা কোনো অপরাধ নয়, তাই মৃত কর্মচারীর পরিবার-পরিজনকে শাস্তির বদলে স্বস্তি দেওয়াই যেতে পারে।

লেখক : আকম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053720474243164