ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকেরা। সেখানে তারা আগামী শনিবার পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এই সময়ে তাদের কর্মবিরতি চলবে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চিকিৎসকেরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বেলা ২টার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে নতুন ঘোষণা দেয়া হয়।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাবির হোসেন বলেন, তারা আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছেন। উপাচার্যকে জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার ঘোষিত মাসে ২৫ হাজার টাকা ভাতায় তারা সন্তুষ্ট না। তারা সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভাতা কাঠামো চান। উপাচার্য বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গেও তারা কথা বলছেন। আজ বা আগামীকাল সবাই মিলে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আগামী শনিবারের (২২ জুলাই) মধ্যে যদি কোনো প্রস্তাব না আসে, তবে পরদিন রোববার মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাবির হোসেন বলেন, তারা শনিবার পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। তবে তাদের কর্মবিরতি চলবে।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের আবাসিক-অনাবাসিক চিকিৎসকেরা মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পেয়ে আসছিলেন। এই ভাতা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবি তাদের। এই দাবিতে তারা কয়েক মাস ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। আন্দোলনের মুখে গতকাল রোববার রাতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, স্নাতকোত্তরের চিকিৎসকদের ভাতা ৫ হাজার বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। অবিলম্বে তা কার্যকর করা হবে। তবে সরকারের এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা।
আজকের অবস্থান কর্মসূচিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকেরা বলেন, ২৫ হাজার টাকায় বাসাভাড়াই হয় না। চিকিৎসকদের কষ্ট কে দেখবে? চিকিৎসকেরা তো চলতে পারছেন না। তারা বিলাসী কিছু চাচ্ছেন না। তারা ন্যূনতম এমন একটা ভাতা চান, যা দিয়ে চলতে পারেন।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকেরা কর্মসূচি-কর্মবিরতি পালন করে আসছেন।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ৮ জুলাই কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেন স্নাতকোত্তরের চিকিৎসকেরা। পরদিন ৯ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে গত ১৩ জুন বিএসএমএমইউ উপাচার্যকেও তারা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা জানান, ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তারা। এর পরও কোনো উদ্যোগ না দেখে তারা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গতকাল সকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশি বাধায় তা করতে পারেননি চিকিৎসকেরা। পরে দুপুরের দিকে বিএসএমএমইউর সব ফটকে তালা দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে তারা অবস্থান নেন। এদিন বেলা একটার দিকে বিএসএমএমইউ থেকে বের হয়ে শাহবাগে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে চিকিৎসকদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে শাহবাগ থেকে কাঁটাবনমুখী সড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান নেন চিকিৎসকেরা। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন, সড়কে তৈরি হয় যানজট। চিকিৎসকদের আন্দোলনের মধ্যে গতকাল বিকেলে তাদের একটি প্রতিনিধিদল বিএসএমএমইউ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে। উপাচার্য এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা সড়ক ছাড়েন। পরে রাতে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা আসে।
স্নাতকোত্তরের চিকিৎসকেরা উচ্চশিক্ষার জন্য দুই থেকে পাঁচ বছরের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। এ সময় তারা হাসপাতালের বাইরে অন্য কোথাও সেবা দিতে পারেন না।