নিবন্ধন নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের হাঁকডাক থাকলেও গতি নেই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠদান অনুমোদন এবং নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা ঘোষণার আট মাস পেরোলেও আশানুরূপ সাড়া নেই নিবন্ধনে। ফলে দেশে এসব স্কুলের সঠিক সংখ্যা নিয়ে যেমন অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, তেমনি এসব স্কুলে শিক্ষাব্যবস্থারও কোনো তদারকি হচ্ছে না। শুক্রবার (২৮ জুন) আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদন লিখেছেন এম এইচ রবিন।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধনের অগ্রগতি প্রসঙ্গে গত বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, কিন্ডারগার্টেনসহ দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন ও শিক্ষাবিষয়ক (একাডেমিক) স্বীকৃতির আওতায় আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছে। ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ নিবন্ধন বা একাডেমিক স্বীকৃতির আওতায় চলে এসেছে। এখনো বেসরকারি বিদ্যালয়ের অধিকাংশই নিবন্ধন হয়নি। সেগুলো তাদের ইচ্ছেমতো চলছে। আগে একটি বিধিমালা থাকলেও সেটি বাস্তবে কাজে দেয়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসপিএসসি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের তথ্যানুযায়ী, দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৭৮টি। এনজিও পরিচালিত স্কুল আছে ৩ হাজার ৩১০টি। অন্যদিকে বেসরকারিতে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্য হচ্ছে, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (কিন্ডারগার্টেন) সংখ্যা ৬০
হাজার ছিল কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে। তবে আর্থিক সংকটে গত তিন বছরে প্রায় ১০ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি যে ৫০ হাজার স্কুল আছে এগুলোয় প্রায় দশ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। অর্থাৎ এখনো নিবন্ধনের বাকি আছে পঞ্চাশ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
গত ১১ নভেম্বর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা-২০২৩ গেজেট প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নিবন্ধন নীতিমালার শর্তে বলা হয়েছে- পাঠদানের অনুমতি ফি (১ বছরের জন্য) বিভাগীয় শহর- ৫ হাজার টাকা, জেলা শহর ৩ হাজার টাকা, উপজেলা শহর- ২ হাজার টাকা। নিবন্ধন ফি (৫ বছরের জন্য) বিভাগীয় শহর- ১৫ হাজার টাকা, জেলা শহর ১০ হাজার টাকা, উপজেলা শহর- ৮ হাজার টাকা। নিবন্ধন নবায়ন ফি (৫ বছরের জন্য) বিভাগীয় শহর- ৭ হাজার ৫শ টাকা, জেলা শহর ৫ হাজার টাকা, উপজেলা শহর- ৪ হাজার টাকা। সংরক্ষিত তহবিলে জমা রাখতে হবে বিভাগীয় শহর- ১ লাখ টাকা, জেলা শহর ৭৫ হাজার টাকা, উপজেলা শহর- ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি স্কুলের সব আয় সাধারণ তহবিলে জমা করে প্রয়োজনমতো ব্যয় করতে হবে। ব্যাক্তির নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করতে ৫ লাখ টাকা সংরক্ষণ তহবিলে জমা দিতে হবে। (বিদ্যমান বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে লাগবে না) শিক্ষার্থী : শিক্ষক অনুপাত হতে হবে ৩০ঃ১। জমি বা ভাড়া বাসায় জমির পরিমাণ বিভাগীয় শহরে ০.৮ শতক, জেলা শহরে ০.১২ শতক, উপজেলা শহরে ০.৩০ শতক থাকতে হবে। প্রত্যেক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। এই কমিটিতে পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকবেন। কমিটি প্রত্যেক অর্থবছর সমাপ্ত হওয়ার পর উক্ত বিদ্যালয়ের আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কোনো অডিট ফার্ম বা ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক গঠিত অডিট কমিটি দ্বারা নিরীক্ষা সম্পাদন করিবে এবং উহার একটি রিপোর্ট নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে।
শর্তগুলো বেসরকারি স্কুল উদ্যোক্তাদের শিক্ষাদান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে জানিয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেন নির্ধারিত জমি বা ভাড়া করা বাড়িতে বিদ্যালয় পরিচালনা, পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষককে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রাখা এবং পাঠদান ও নিবন্ধন অনুমতির জন্য পৃথক আবেদন ও অর্থ খরচের শর্ত দেওয়া হয়েছে বিধিমালায়। প্রায় সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন শর্তের প্রতিটি পূরণ করতে ব্যর্থ হবে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের পাশাপাশি বেকার হবেন শিক্ষক কর্মচারী, পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হবে শিক্ষার্থীদের।
ইকবাল বাহার বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকায় বিদ্যালয়ের জন্য দশমিক শূন্য আট একর জায়গার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে যা প্রতিষ্ঠানগুলোর কারোর পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে এই পরিমাণ জমিতে আট থেকে দশ লাখ টাক দিয়ে স্কুলের জন্য ভবন ভাড়া পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, একটি সরকারি স্কুলের আশপাশে প্রায় ১০০ বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল আছে। সবগুলো স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে একজন প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত থাকলে তিনি কীভাবে সব সভা, নিয়োগ বোর্ড ও অন্যান্য কাজে সময় দেবেন। নিজ স্কুল পরিচালনার সময় কোথায় পাবেন?