শহরে হাঁপানি বেশি হওয়ার কয়েকটি কারণ, যেভাবে সাবধান থাকবেন

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউটের তথ্য মতে প্রতিষ্ঠানটির হাসপাতালে যত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন তার ৩০ শতাংশ হাঁপানি রোগী এবং প্রতিবছর সংখ্যাটি বাড়ছে।

বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন প্রতি দশ বছর অন্তর শ্বাসতন্ত্রের অসুখ সম্পর্কিত জরিপ পরিচালনা করে থাকে। তাতে দেখা গেছে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ৭০ লাখ হাঁপানি রোগী ছিল। 

তার ১০ বছর পর রোগীর সংখ্যা আরো ২০ লাখ বেড়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জরিপটি পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু শহরাঞ্চলে হাঁপানি অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

হাঁপানির লক্ষণগুলো কী?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি উদ্যোগ গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর অ্যাজমা। এর বাংলাদেশ সমন্বয়ক ডাঃ কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলছেন হাঁপানির প্রাথমিক চারটি লক্ষণ।

আপনার যদি মাঝে মাঝেই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাসের সাথে সাঁ সাঁ শব্দ শুনতে পান, সেই সাথে শুকনো কাশি, প্রায়শই এই কাশি একটানা অনেকক্ষণ ধরে চলে, বুকে চাপ অনুভব করা এবং খুব অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া- এই লক্ষণগুলো যদি থাকে তাহলে আপনি সম্ভবত হাঁপানিতে আক্রান্ত। এসব সমস্যা লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ারা পরামর্শ দিচ্ছেন ডাঃ বেননুর।

হাঁপানি বংশগত হতে পারে আবার পরিবেশগত কারণেও হতে পারে। তবে ইদানীং পরিবেশগত কারণটিই বেশি দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক যে কারো হাঁপানি হতে পারে।

রাজশাহী শহরের বাসিন্দা ফারহানা নাহারকে হাঁপানির জন্য ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত ইনহেলার ও কিছু ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলছেন, কিছু সময় আছে যখন তার হাঁপানির প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়।

"যেদিন বাতাসে খুব ধুলোবালি থাকে, বিশেষ করে গরমকালে, সেই ধুলোবালি যদি নাকে যায় তাহলে সাথে সাথে হাঁচি শুরু হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, শ্বাসে টান উঠে যায়। তখন আমাকে ইনহেলার নিতে হয়। বদ্ধ ঘরে কয়েকদিন থাকলেও একই ধরনের সমস্যা হয়।"

পুরনো ঢাকার নারিন্দায় থাকেন নুর-ই-ফাতেমা। তার সমস্যাও ধুলোবালিতে।

তার বয়স ৪০-এর কোঠায়। তিনি বলছেন, "ঘর ঝাড়ু দিলে, বিছানা ঝাড়লে যদি খুব ধুলো থাকে অথবা ঝড় হলে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়, হাঁচি বেড়ে যায়। আমি যখন ঘর পরিষ্কার করি তখন সবসময় নাকমুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে নেই।"

শহরে হাঁপানি কেন বেশি হচ্ছে

শহর অঞ্চল, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং যেখানে নগরায়নের প্রক্রিয়া চলছে সেখানে হাঁপানি বেশি হচ্ছে বলে বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অ্যাজমা ইউকে বলছে বায়ু দূষণ হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। নগরায়ন ও বায়ুদূষণ হাঁপানির জন্য যেভাবে দায়ী তা ব্যাখ্যা করছিলেন ডাঃ বেননুর।

তিনি বলছেন, "শহরে পরিবেশ দূষণ বেশি থাকে। ধুলো, ধোয়ার মতো পরিবেশ দূষণের কারণে ফুসফুসের এই রোগটি দ্রুত প্রকাশিত হয়। যাদের হাঁপানি রোগটি আছে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি ভুগে থাকেন। যাদের কম সমস্যা রয়েছে তাদের হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে।"

শহরে হাঁপানি বৃদ্ধির অন্য কারণগুলোর একটি ঘনবসতি। শহরে বহু মানুষকে খুব ঘিঞ্জি ঘরে বসবাস করতে হয় যা ঘরের ভেতরের পরিবেশকে স্যাঁতসেঁতে ও অস্বাস্থ্যকর করে তোলে।

ঘরের কোনায়, আসবাবের তলায় জমে থাকা ধুলো এবং সেই ধুলোয় 'ডাস্ট মাইট' নামে এক ধরনের কীট বেশি তৈরি হয়। ধুলো এবং এই কীট হাঁপানি বাড়িয়ে দেয়।

রান্না থেকে যে ধোঁয়া তৈরি হয় তাতেও ঘরের ভেতরে পরিবেশ দূষণ হয়ে থাকে। শহরে বদ্ধ ঘরে রান্নার ধোঁয়া বের হওয়ার জন্য ব্যবস্থা থাকে না, যা বিশেষ করে নারী ও শিশুদের আক্রান্ত করে।

গ্রামাঞ্চলে পরিবেশ খোলামেলা হওয়ার কারণে এসব সমস্যা কম হয়ে থাকে।

নগরীতে মানুষের জীবনযাপনে যে পরিবর্তন দেখা দেয়, যেমন টাটকা খাবারের বদলে অনেক কৃত্রিম খাবার শরীরে প্রবেশ করে। শহরে ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রমও কমে যায়।

বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে দূষণের পাশাপাশি খেলাধুলার জয়গার অভাব, ঘরে বন্দি জীবন তাদের ফুসফুসের সবল বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। দুর্বল ফুসফুসে হাঁপানির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

সুস্থ থাকতে যাকরা প্রয়োজন

এ সম্পর্কে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন ডাঃ কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর। তিনি বলছেন, গাড়ির দূষণ রয়েছে, প্রচুর নির্মাণকাজ চলছে এমন জায়গায় গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন।

দিনের যে সময়ে যে এলাকায় দূষণ বেশি হয় সে সময়টি বাইরে যাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে।

ঢাকার কিছু এলাকায় সকালে অফিস যাওয়ার সময় বায়ু দূষণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। সেই সময়টুকু এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ঘরদোর নিয়মিত পরিষ্কার করা, ঘরে কাগজপত্র জমিয়ে না রাখা, বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করারও পরামর্শ দিচ্ছেন ডাঃ বেননুর।

তিনি বলছেন, কিছু টিকা রয়েছে যা নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে দেয়া হয়ে থাকে। সেগুলো হাঁপানি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

সুষ্ঠু জীবনযাপন, ভাল খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ধূমপান পরিত্যাগ-এই কয়েকটি বিষয়ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন তিনি।

খোলামেলা পরিবেশ ও নির্মল বাতাসে থাকার কথা বললেও ঢাকায় এমন পরিবেশ পাওয়া খুবই মুশকিল।

ডাঃ বেননুর বলছেন, "বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু বিষয় রূপকথার মতো শোনাবে কিন্তু তবুও চেষ্টা করতে হবে।"

সূত্র: বিবিসি বাংলা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031509399414062