শহরের চেয়ে গ্রামে স্কুল ব্যাংকিং জনপ্রিয় বেশি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: গত এক বছরে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় অ্যাকাউন্ট খোলা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ। আর আমানত বেড়েছে প্রায় ২১২ কোটি টাকা। সব মিলে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট ৪২ লাখ ছাড়িয়েছে। আর আমানত স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে শহরের চেয়ে গ্রামে এ সেবার জনপ্রিয়তা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। কারণ মোট অ্যাকাউন্টের ৫৫ শতাংশই গ্রামের শিক্ষার্থীদের। তবে সঞ্চয়ে এগিয়ে শহরের শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি বাণিজ্যিক ব্যাংকও আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে। ওই আমানত বিনিয়োগ হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে। আর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর স্কুল ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয়। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো ছোটবেলা থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাত্র ১০০ টাকা জমায় অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ মিলছে স্কুল ব্যাংকিংয়ে। আবার জমাকৃত সঞ্চয়ের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সুদ বা মুনাফা দিচ্ছে তুলনামুলক ভালো। এ ছাড়া এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়। যেমন- সব ধরনের ফি ও চার্জে রেয়াত সুবিধা, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। এসব কারণে স্কুল ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে। গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ ১২ হাজার ৩০৩টি। এক বছর আগে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৬২ হাজার ৪২৫টি। ফলে গত এক বছরের ব্যবধানে স্কুল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৮টি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৩টি, যা মোট অ্যাকাউন্টের প্রায় ৫৫ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছর আগে গ্রামের অ্যাকাউন্ট ছিল ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৫৫১টি। ফলে এক বছরের ব্যবধান গ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলা বেড়েছে প্রায় ৬ লাখ ৮২ হাজার ৫০২টি। অন্যদিকে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় শহরের শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০টি, যা মোট অ্যাকাউন্টের প্রায় ৪৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এক বছর আগে শহরের অ্যাকাউন্ট ছিল ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৭৪টি। ফলে এক বছরের ব্যবধান শহরে অ্যাকাউন্ট খোলা বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৬টি।

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এতে অভিভাবকদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। তারপরও স্কুল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। গত এক বছরে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আমানত বেড়েছে প্রায় ২১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সব মিলে ডিসেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ৮৩ লাভ টাকা। এ সময়ে গ্রামে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা এক বছর আগেও ছিল ৬৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে, গত বছর শেষে শহরে আমানত বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে ছিল ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, স্কুল ব্যাংকিংয়ে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অ্যাকাউন্ট খোলায় এগিয়ে রয়েছে। মোট অ্যাকাউন্টের ৫১ শতাংশই ছেলেদের। এর পরিমাণ ২১ লাখ ৫০ হাজার ৬৬০টি। আমানতের পরিমাণেও এগিয়ে রয়েছে ছেলেরাই। মোট আমানতের ৫৪ দশমিক ৫৯ শতাংশই ছেলেদের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029499530792236