শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত বেরোবি

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে যে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল, সেটি আজ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) নামে উত্তর জনপদের মানুষের স্বপ্নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল। সেই সময় সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. রেজাউল হক স্যারের নেতৃত্বে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ গঠিত হয়েছিল। এ আন্দোলনের সফলতার মধ্য দিয়ে রংপুরের গর্বিত সন্তান অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান স্যারকে প্রথম উপাচার্য করে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। শনিবার (১২ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত পাঁচজন উপাচার্যের নেতৃত্ব পেয়েছে। ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে আমি গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে দায়িত্বভার গ্রহণ করি। দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল। জুলাই বিপ্লবের পর প্রায় দুই মাস উপাচার্যশূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে আমি যোগদানের পরপরই জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিই। ২৫ সেপ্টেম্বর হল খুলে দিই। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এর প্রধান অংশীজন। তাই আমি সর্বদা তাদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সরাসরি তাদের মুখ থেকে শোনা এবং তাদের চাহিদা ও প্রত্যাশা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য সময় ব্যয় করেছি। অডিটোরিয়াম না থাকায় অনুষদভিত্তিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছি, যেখানে তারা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সমস্যার কথা তুলে ধরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অডিটোরিয়ামের গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমি এ প্রতিষ্ঠানে একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো সশরীরে পরিদর্শন করেছি। প্রায় ৮০০০ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৮০০টি আবাসিক আসন প্রয়োজনের তুলনায় কতটা অপ্রতুল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবাসনের এই সংকট বিশ্ববিদ্যালয়টির সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বড় প্রতিবন্ধক। বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আবাসিক আসনের সংখ্যা কমপক্ষে ১৯ গুণ করা প্রয়োজন। আমি আমার দায়িত্বকালে দুটি ছাত্র হল এবং দুটি ছাত্রী হল নির্মাণের লক্ষ্য স্থির করেছি, যা শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব করবে বলে আমার বিশ্বাস।

এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ নিয়ে যে জটিলতা ছিল, তা আলোচনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। সব শিক্ষকের  সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করে তাদের যৌক্তিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অধিকাংশ সমস্যার সমাধান আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সম্ভব। সেই লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে মতবিনিময় এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। আমি কখনও কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর উপাচার্য হওয়ার চেষ্টা করিনি; বরং নিজেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একজন অভিভাবক হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সবার সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সহজেই সামনে এগিয়ে নিতে পারব এবং এটি উত্তরবঙ্গের শিক্ষার এক উজ্জ্বল বাতিঘর হিসেবে গড়ে উঠবে।

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জুলাই বিপ্লবের অগ্রদূত, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদসহ শত শত বীর শহীদের, যাদের আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। শ্রদ্ধার সঙ্গে আরও স্মরণ করি পঙ্গুত্ব বরণকারী ও আহত সেই ছাত্র-জনতাকে, যাদের আত্মত্যাগে বাংলাদেশ নতুন পথে এগিয়ে চলেছে। শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আজ তার শহীদের নামে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিশেষভাবে ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি আবু সাঈদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। তার স্মৃতিবিজড়িত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন থেকে বাজেট বঞ্চনার শিকার। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাবৎকালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে ২০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলো বেরোবির সমসাময়িক, যারা এক অর্থবছরে বরাদ্দ পায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই বাজেট বৈষম্য বেরোবিকে একটি উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। 

আমি শুরু থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টার পূর্ণ সহযোগিতা পেয়ে আসছি। বিশেষ করে আবু সাঈদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানে যে উন্নয়ন বৈষম্য রয়ে গেছে, তা দূরীকরণে তাদের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি। জেনারেশন জেডের প্রতিনিধি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমি আবু সাঈদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। এ জন্য রংপুরের সাধারণ মানুষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত সহযোগিতা কামনা করছি, যাতে আমরা একযোগে এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পথ সুগম করতে পারি। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই আমার কাম্য।

অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী: উপাচার্য, বেগম রোকেয়া
বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029890537261963