শহীদ মিনার নেই ভোলার দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

ভোলা প্রতিনিধি |

ভোলার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছেন না এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র ও শিক্ষকরা জানান, অর্থ বরাদ্দ না থাকাসহ নানা কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা যায়নি। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলার ১৫১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। প্রতি বছর কলাগাছ, বাঁশের কঞ্চি ও সাদা কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন করেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর ফলে শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে না ভাষার তাৎপর্য, জানাতে পারছে না ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে ভাষা দিবস পালন করা হয় না। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও দিবস কী জানে না। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজার ৬১৭টি। এর মধ্যে কলেজ ৪৫টি, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭১টি, মাদ্রাসা ২৫৪টি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪৭টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২০টি, দৌলতখানের ১২টি, বোরহানউদ্দিনের ১৪টি, তজুমদ্দিনের ৯টি, লালমোহনের ১৭টি, চরফ্যাশনের ২৪টি এবং মনপুরার ৯টিসহ ১০৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি এক হাজার ৫১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহীদ মিনার না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার প্রত্যন্ত এলাকার অনেক শিক্ষার্থী ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস সম্পর্কে জানে না। 

সদর উপজেলার ২২ নম্বর টগবী চর ছিফলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। তাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ২১ ফেব্রুয়ারির দিন তারা বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। কিন্তু বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার না থাকায় ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় না। ভাষাশহীদদের তারা ভালোভাবে চেনেন না।

জায়গা না থাকায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নির্মূল কৃষ্ণ। এই চিত্র শুধু টগবী চর ছিফলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়; জেলার এক হাজার ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার।

জেলার ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাছুমা খানম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘৫৩ বছর ধরে এই অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। অথচ আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনও তহবিল নেই, যা থেকে আমরা একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করবো। প্রতি বছর আমরা ভোলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানাই। এখানে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানাই।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলা হয়েছে নিজেদের উদ্যোগে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য। যাদের নির্মাণের সামর্থ্য নেই, তারা যেন আশপাশে যেখানে শহীদ মিনার আছে সেখানে শহীদদের সম্মান জানায়।’

সম্প্রতি নির্মিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের সরকারি কোনও তহবিল নেই। তবে ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা দিতে হলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0081348419189453