শাবিপ্রবিতে পরীক্ষা না দিয়ে পাস এক শিক্ষার্থী

দৈনিকশিক্ষাডটকম, শাবিপ্রবি |

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে চূড়ান্ত ফলাফলের তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং আরো ১০ জন শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত ফলাফলে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ইংরেজি বিভাগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বরে।

ওই পরীক্ষায় সাউথ এশিয়ান লিটারেচার ইন ইংলিশ কোর্সের (কোর্স কোড-ইএনজি-৪১৫) পরীক্ষা ছিল ৪ ডিসেম্বর। এদিকে এক বছর ড্রপ হওয়া ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-২০১৩২৩৬০৩৫) ওই পরীক্ষায় অংশ নেননি। তাঁর নাম পরীক্ষার্থীদের টপশিটেও নেই।

ওই কোর্সের প্রথম পরীক্ষক অধ্যাপক হোসেন আল মামুন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক সহযোগী অধ্যাপক সাইফ আহমেদ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি যে শিট তৈরি করেছেন, তাতেও ওই শিক্ষার্থীর ফলাফল নেই। দুটি ফলাফল শিট তাঁরা ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের সাউথ এশিয়ান লিটারেচার ইন ইংলিশ কোর্স পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল শিটে ওই শিক্ষার্থী (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-২০১৩২৩৬০৩৫) ২.৫০ পেয়ে পাস করেছেন!

এদিকে ওই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আরও ১০ জন শিক্ষার্থীকে তাঁদের ফলাফলে প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৪-১৪ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

পরীক্ষা না দিয়ে পাস করা ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। ফোনে ওই শিক্ষার্থী নিজেই বলেন, ‌‘পরীক্ষা না দেওয়ার কারণেই আমি পরেরবার একই কোর্সে আবার পরীক্ষা দিই। তখন আমি ২.৭৫ পেয়ে পাস করি। কিন্তু তারা প্রথমবার পরীক্ষা না দেওয়ার পরও আমাকে কম নম্বর দিয়ে পাস দেখানোয় চূড়ান্ত ফলাফলে প্রভাব ফেলে। সিজিপিএ কম আসে।’

২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের সাউথ এশিয়ান লিটারেচার ইন ইংলিশ কোর্স পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক সিকান্দার আলী এবং সদস্য অধ্যাপক শরিফা ইয়াসমিন, সহযোগী অধ্যাপক আফরোজা খানম, রাজিক মিয়া ও সাইফ আহমেদ। রাজিক ও সাইফ ছাড়া বাকিরা ট্যাবুলেটর ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হোসেন আল মামুনও নথিপত্র ঘেঁটে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। বিভাগে নথিপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার কিছুই করার নাই।’

শাবির উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুখলেছুর রহমান পারভেজ বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী ফলাফলের দায়ভার পরীক্ষা কমিটির। চেয়ারম্যান, সদস্য ও ট্যাবুলেটর প্রত্যেকেই ফলাফলের সবকিছুর জন্য দায়ী হবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।  

অভিযোগের বিষয়ে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের সাউথ এশিয়ান লিটারেচার ইন ইংলিশ কোর্স পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিকান্দার আলী বলেন, ‘গত পাঁচ বছরের মধ্যে কেউ এ রকম কোনো প্রশ্ন তুলে নাই। এ রকম অভিযোগ একেবারেই অবান্তর। তবু যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, আমরা পরীক্ষা কমিটি বসে দেখতে হবে। এরপর বলতে পারব।’ 
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সারওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আপাতত আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা চালু নিয়ে ব্যস্ত। এরপর অন্যান্য বিষয়ে নজর দেব। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা খতিয়ে দেখব। সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046310424804688