দৈনিকশিক্ষাডটকম, পাবনা: মন্ত্রণালয়ের বদলির আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সদম্ভে আগের কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষক আইয়ুব আলী। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের লিখিত অভিযোগের সংখ্যা অন্তত ২০টি। অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত হয়। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে গত বছরের ৭ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে আইয়ুব আলীর বদলির আদেশ জারি হয়, সেই সঙ্গে সাময়িকভাবে তার বেতনও স্থগিত করা হয়।
আইয়ুব আলী পাবনার বেড়া উপজেলার মাছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী। তার অত্যাচারে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যেমন অতিষ্ঠ, তেমনি অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে বাড়ির ব্যক্তিগত কাজ করানো ও মারধর, বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অর্থ তছরুপ, স্কুলের উন্নয়ন কাজের রড, বালি ও ইট চুরি, করোনাকালের বরাদ্দ আত্মসাৎ, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন আইয়ুব আলী। শিক্ষক-অভিভাবকরা সুনির্দিষ্ট ২০টি অভিযোগ করলে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হন তিনি।
বিদ্যালয়টির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের পিটুনির ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। ফলে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষর্থী। প্রধান শিক্ষকের অত্যাচারে তারা নিজেরাও অতিষ্ঠ বলে জানান শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
কয়েকজন শিক্ষকের দাবি, বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে আইয়ুর আলী আগের কর্মস্থলেই অবস্থান করছেন। তবে, শিক্ষা অফিস তাকে বহালের কোনো চিঠি দেয়নি।
প্রধান শিক্ষক আইয়ুর আলীর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমানও। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বদলি আদেশ হওয়ার পরও কোন ক্ষমতাবলে তিনি এই স্কুল থেকে যাচ্ছেন না বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি না। তার বেতন-ভাতাও বন্ধ আছে। আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিচ্ছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আমাদের দাবি এই দুর্নীতিবাজ শিক্ষককে এই স্কুল থেকে সরানো হোক। তিনি থাকা অবস্থায় স্কুল পরিচালনায় ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি চলে গেলে স্কুলটি কলঙ্কমুক্ত হয়।’
প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমার বদলির আদেশ হয়েছে সত্য; তবে আমি অসুস্থ বিধায় মন্ত্রণালয়ের একজন পরিচালকের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আগের কর্মস্থলেই কাজ করে যাচ্ছি।’ মন্ত্রণালয়ের ওই পরিচালকের নাম জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কখন, কোথায় দেখা করব?’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলীর অপরাধ ও বদলি আদেশের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কেন তাকে এখনো মাছখালী স্কুলে বহাল রাখা হয়েছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।