পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস ছাড়াই রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েতগামী বিমানে উঠে দেশজুড়ে আলোচনায় আসা শিশু জুনায়েদ মোল্লাকে বাড়িতে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
রাজধানীর বিমানবন্দর থানা থেকে মঙ্গলবার রাতে জুনায়েদকে বাড়িতে আনা হয়। এরপর বুধবার সকালে আবারও পরিবারের সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় জুনায়েদ। অনেক খোঁজাখুঁজি করে শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া হয়। পরে ধরে এনে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।
জুনায়েদ মোল্লা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের ইমরান মোল্লার ছেলে। ইমরান মোল্লা পেশায় একজন সবজি ব্যবসায়ী।
গত সোমবার রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে উঠে পড়ে জুনায়েদ মোল্লা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, এর আগেও কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের যাওয়ায় জুনায়েদকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো।
জানা যায়, ইমরান মোল্লার প্রথম পক্ষের ছেলে জুনায়েদ। কয়েক বছর আগে তার মা অন্যত্র চলে যায়। এরপর থেকে সে সৎমায়ের কাছে বড় হতে থাকে।
বিমানবন্দরের সব নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে উঠে পড়া জুনায়েদ মোল্লা জানায়, কোনো কিছু না ভেবে শখের বসে বিমানে উঠেছিল সে। বিমানে উঠতে যে পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস-ভিসা লাগে, বিষয়টি তার জানা নেই। সে ভুল করে বিমানে উঠে পড়েছিল বলে জানায়।
শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লা জানান, তার ভাতিজা জুনায়েদ মোল্লা খুবই দুরন্ত। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে সে কয়েকবার পালিয়ে আসে। পরে তাকে মাদ্রাসা থেকে এনে স্কুলে ভর্তি করা হয়। তবুও সে মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়, পরে একাই ফিরে আসে।
তিনি আরও জানান, সপ্তাহখানেক আগে জুনায়েদ আবারও বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি আমরা তার খোঁজ পাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারি, সে সেখান থেকেও পালিয়ে গেছে।
ইউসুফ মোল্লা জানান, জুনায়েদের বিমানে উঠে পড়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না। সম্প্রতি বিমানবন্দর থানা থেকে আমাদের ফোন করা হলে বিষয়টি জানতে পারি। এরপর তাকে বিমানবন্দর থানা থেকে নিয়ে আসা হয়।
বিমানটি উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেওয়ার আগ মুহূর্তে জানা যায়, সে ওই ফ্লাইটের যাত্রী নয়। পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস ছাড়া বিমানে উঠে পড়েছিল সে। পরে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে বিমানবন্দর থানা হেফাজতে রাখা হয়।
বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের ওই ফ্লাইট (কেইউ-২৮৪) উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় একটি ছেলেশিশু বিমানের ভেতরে করিডোরে হাঁটাহাঁটি করছিল। কেবিন ক্রু তাকে সিটে বসার পরামর্শ দেন। তখন বিমানের কয়েকটি আসন খালি থাকায় ওই শিশুটি একটিতে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পাশের আসনের যাত্রী তাকে তার মা-বাবার কাছে গিয়ে বসতে বলেন। কিন্তু শিশুটি তার মা-বাবার বিষয়ে কোনোকিছু বলতে পারছিল না।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিয়া জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিমানে উঠে পড়া শিশুটিকে তার চাচা ইউসুফ মোল্লার নিকট তাকে হস্তান্তর করা হয়।
মুকসুদপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, বিমানবন্দর থানা থেকে আমাদের ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর আমরা ওই শিশুর পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করি। পরে তারা বিমানবন্দর থানা থেকে শিশুটিকে নিয়ে আসে।