শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের ‘বিধি মোতাবেক’ সুখবর আসলে কী

ভাষ্যকর, দৈনিক আমাদের বার্তা |

শিক্ষা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে প্রধান উদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, শিক্ষা  উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায়ের-এর কাছে প্রতিদিন ডজন ডজন আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ, কিছু সংক্ষুব্ধ, কিছু বঞ্চিত ও কিছু ভুক্তভোগীদের। তারা কেউ ১৬ বছরের বঞ্চনার প্রতিকার চান। কেউবা চান দুর্নীতিবাজদের শাস্তি।

আরো পড়ুন: প্রসঙ্গ শিক্ষক নিবন্ধন : টার্মিনাল আর লঞ্চের টিকিট এক নয়

নাগরিকরা সরকারের কাছে নামে-বেনামে আবেদন দিতেই পারেন। তবে, কিছু অভিযোগ বা আবেদন থাকে একেবারে হুদাই। এবং এমন হুদাই অভিযোগ ও আবেদন সব সরকারের আমলেই কমবেশি হয়ে থাকে। তাই এমনসব আবেদনের ভাগ্য নির্ধারণে কিছু লিখিত ও অলিখিত নিয়ম, বিধান ও রেওয়াজ চালু রয়েছে আমাদের দেশে। এরই অংশ হলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়,  দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর বা সংস্থার কাছে আবেদনের কপি পাঠিয়ে দেওয়া। এই পাঠিয়ে দেওয়াটা একটা চিঠির মাধ্যমে হয় বেশিরভাগ  সময়। সেখানে জুড়ে দেওয়া শব্দ বা বাক্যেরও নানান মাজেজা আছে। এমনই এক মাজেজাপূর্ণ বাক্য হলো ‘বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা’। ঠিক কবে আমাদের আমলাতন্ত্র এমন বাক্য বা বাক্যাংশ লেখা শুরু করেছে তা জানতে পারিনি। তবে, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা বা মন্ত্রী অথবা সচিব কারো আবেদনের ওপর এই বাক্য লিখে দেওয়ার পর এটাকেই সিদ্ধান্ত বা আদেশ/নির্দেশ বা পজেটিভ কিছু বলে চালিয়ে দিয়ে আর্থিক ফায়দা নিতে দেখেছি অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে। কোনো কোনো প্রচার বা গণমাধ্যম এমন বাক্যকেই নির্দেশ/আদেশ বলে চালিয়ে দিতে দেখেছি অনেক। এতে কয়েকদিন হইচই ফেলা যায়। যদিও কিছুদিন পর আসল মাজেজা প্রকাশ হয়ে পড়ে কোনো না কোনোভাবে।

শিক্ষা সংক্রান্ত ঠিক এমন একটা ঘটনা আবার সামনে এসেছে কয়েকদিন আগে। বেসরকারি মাধ্যমিক ও তদুর্ধ প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক হিসেবে আবেদন করার প্রাক-যোগ্যতার প্রত্যয়ন বা নিবন্ধন সনদ নিয়ে সরাসরি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ঘুরছেন কয়েক হাজার মানুষ। সনদ দুই রকম তা তা চেপে যান সর্বত্র। তাদের অনেকের বয়স চল্লিশের বেশি। অথচ দৈনিক শিক্ষাডটম-এ গত সপ্তাহে খবর বেরিয়েছে কঠিন প্রতিযোগীতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বেশিরভাগের বয়স ২৯ এর কম। সরলভাবে ব্যাখ্যা করলে বেশি বয়সীরা বিসিএস পরীক্ষায় টেকে কম। 

 

 

২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে চালু হয় নিবন্ধন পরীক্ষা। সেই থেকে ১২তম অবধি পরীক্ষাগুলো ছিলো একই গুরুত্বের। এই প্রথম থেকে ১২তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যারা শিক্ষকতায় বা অন্য  কোনো চাকরিতে যেতে পারেননি তাদের একাধিক জোট তৈরি হয়েছে। এইসব জোট তৈরির প্রেক্ষাপট বা এর পেছনে ভূমিকা কাদের সে বিষয়ে বিস্তর আলোচনা দাবি রাখলেও আজকে তা সচেতনভাবে এড়িয়ে গিয়ে মূল কথায় ফিরে আসি। 

প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছেন সেই প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের একাংশ।  আবেদনের গুরুত্ব বাড়াতে কয়েকটি কঠিন শব্দ বা শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন তারা। যেসব শব্দ গত ১০ বছরে তারা একই ধরণের আবেদনে ব্যবহার করেননি। তাদের লক্ষ্য শব্দগুলো দেখে কর্তৃৃপক্ষের মনে দাগ কাটে ও আবেদন পাঠান্তেই যেন আবেদনকারীদের প্রকৃতবঞ্চিত মনে হয় এবং  সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়কে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

আরো পড়ুন: পায়ে পড়া শিক্ষকদের গায়ে পড়া শিক্ষার্থী ও দায়ে পড়া সরকার

আমাদের আমলাতন্ত্র খুব পুরনো, আন্তর্জাতিক মানের বা ঝানু না হলেও মধ্যবয়সী তো হবেই। তাই এসব আবেদন অগ্রায়নের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া বাক্যের গুরুত্বপূর্ণ শব্দবন্ধ হলো ‘বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা’। তবে, ফেসবুকের যুগে সবাই সাংবাদিক! সবাই আইনজীবী! সবাই ব্যখ্যাকর্তা!  তাই এবারও পজেটিভ ব্যাখ্যা দিয়ে ফেসবুক  গ্রুপে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ‘সুখবর’।

গত কয়েকবছরে তারা অফিসের ভেতরে এনটিআরসিএ কর্তাদের পায়ে পড়েছেন আবার আদালতেও গেছেন। সব ঘাট ঘুরে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথেও এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানের পায়ে পড়েছেন। 

তবে, তারা ঘাগু। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো ছয় অক্টোবরের চিঠিটি পাওয়ার পরও তারা আবার জমায়েত হওয়ার এবং আন্দোলন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একদিকে বলছেন সুখবর আরেকদিকে আন্দোলন! 

রিট ব্যবসায়ীদের খপ্পড়ে পড়ে নিবন্ধনধারীদের কেউ কেউ কোটিপতি হয়েছেন। সব বিধিবিধান তারা জানেন। তারা জানেন সদরঘাটের টার্মিনাল টিকিট দশ  টাকা। আর জাহাজের কেবিনের ভাড়া কমপক্ষে দুই হাজার টাকা। গন্তব্যে  যেতে হলে কেবিনের ভাড়াই দিতে হবে। টার্মিনালের টিকিটে দেখালে জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া  হয় না। ১  থেকে ১২তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা নিয়োগের জন্য প্রাক-যোগ্যতার সনদ পেয়েছিলেন, নিয়োগের সুপারিশের জন্য নয়। নিয়োগে পেতে হলে, তখন কমিটির নেওয়া নিয়োগ  পরীক্ষায় উতরাতে  হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরের  গেজেট জারির পর অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা শুধু সরাসরি নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়ার যোগ্য, যদি বয়স ও সনদের মেয়াদ থাকে। 

তারা জানেন কোনো বিধানেই তাদেরকে নিয়োগে দেওয়ার সুযোগ নেই। এসব জেনেও তারা আদালতে নিয়ে গেছেন হাজার হাজার নিবন্ধনধারীকে। কতিপয় প্রচার ও গণমাধ্যমে ভিডিও প্রচার করিয়েছেন, কোথাও আবার  ফরমায়েশি প্রতিবেদন। সেই চক্রটিই ৫ আগস্টের পর নিবন্ধন অফিসের সব জনবলকে দিনের পর দিন অমানবিকভাবে অবরুদ্ধ  করে রেখেছিলেন। 

দেখুন সেই চিঠিটা: 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা ঢাবিতে ভর্তি আবেদনের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha ঢাবিতে ভর্তি আবেদনের সময় বৃদ্ধি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু - dainik shiksha ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২ হাজার ৯২৩ শিক্ষক - dainik shiksha উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২ হাজার ৯২৩ শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028760433197021