করোনা মহামারির কারণে সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে সরকার ঘোষিত ৩৯ মাস বয়স ছাড়ের মেয়াদ শেষ। তাই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে নিয়োগে আর বয়সের ছাড় পাবেন না নিবন্ধিত প্রার্থীরা। এসব প্রার্থী এখন পর্যন্ত চলা চারটি শিক্ষক নিয়োগ চক্রের তিনটিতে বয়সের ছাড় পেয়েছিলেন। তবে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে সে সুযোগ আর মিলছে তাদের।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, আগামী শিক্ষক নিয়োগ চক্রে (পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি) শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীরা আর বয়সে ছাড় পাবেন না। সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে সরকার যে বয়সে ছাড় দিয়েছিলো তার মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষে হয়ে গেছে। তাই শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রার্থীদের বয়সে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রত্যাশী প্রার্থীরা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়স ছাড় দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, এ নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে ভাইভা গ্রহণ পর্যন্ত প্রায় চার বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে। করোনা মহামারিসহ নানা বাস্তবতায় বয়সের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও দাবি তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সে সুযোগ দেওয়ার বা চাওয়ার এখতিয়ারও এনটিআরসিএর নেই। সরকার যদি মনে করে বয়সে আরো ছাড় দেয়া প্রয়োজন, আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি আদেশ জারি করে সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে ভাবা হবে।
এর আগে করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পোষাতে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সে তিন দফায় মোট ৩৯ মাস ছাড় দেয় সরকার। বিসিএস ছাড়া সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সব চাকরির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য ছিলো।
প্রথম দফায় বয়সসীমায় ২১ মাস ছাড় দিয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সবশেষ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩৯ মাস ছাড় দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ছাড়া) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সেসব দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ সর্বোচ্চ বয়সসীমার মধ্যে থাকলে ওই প্রার্থী আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
এর আগে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে যখন শিক্ষক পদে প্রার্থী বাছাই করা হয় তখন কোনো বয়সসীমা ছিলো না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন জারি করা এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের শেষে জারি করা দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে বয়স ৩৫ অতিক্রম করা প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়নি। পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আপিল বিভাগের রায়ের প্রেক্ষিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুনের আগে যেসব প্রার্থী সনদ অর্জন করেছিলেন তাদের জন্য বয়সসীমা শিথিল ঘোষণা করা হয়। রিভিউ আবেদনে সে সুযোগও বন্ধ হয়। পরে করোনা মহামারিতে প্রার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সরকার বয়সে ছাড় দেয়। সে অনুযায়ী ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শেষে জারি করা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে যেসব প্রার্থীর বয়স ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছিলো।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।