বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার বিড়ম্বনা কমাতে উদ্যোগী হয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। এজন্য শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ ও এমপিওভুক্তি যাচাই প্রক্রিয়া ‘স্মার্ট’ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এনটিআরসিএর কার্যালয়ে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব করা হয়।
প্রস্তাবে রয়েছে- শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশের দায়িত্বে থাকা সংস্থা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সার্ভার, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও প্রক্রিয়াকরণের সার্ভার ইএমআইএস ও মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও প্রক্রিয়াকরণের সার্ভারে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা বা অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) বসানোর পরিকল্পনা।
প্রস্তাবের পক্ষে বলা হচ্ছে, এনটিআরসিএ-ইএমআইএস-মেমিসে সার্ভারে এপিআই স্থাপন করা হলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পরস্পরের মধ্যে সার্ভারের তথ্য বিনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা সংগ্রহ ও যাচাই প্রক্রিয়া সহজ হবে। ভুল পদে সুপারিশ বন্ধ হবে। জাল সনদধারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এমপিওর (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) টাকা গচ্চা যাওয়া বন্ধ হবে। একইসঙ্গে প্রার্থীদের এমপিওভুক্তিতে ভোগান্তি ও জটিলতা নিরসনে নিয়োগ সুপারিশ করা শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে সোমবারের সভায়।
গতকাল ওই কর্মশালায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটসহ শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তারা অংশ নেন। এনটিআরসিএর সদস্য (অর্থ-প্রশাসন) এস এম মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান।
কর্মশালায় অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তা বলেন, এনটিআরসিএ-ইএমআইএস-মেমিসের মধ্যে এপিআই স্থাপিত হলে শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা সংগ্রহ ও যাচাইয়ে আর মাসের পর মাস সময় লাগবে না। এটি হলে ইএমআইএস থেকে স্কুল-কলেজের ও মেমিস থেকে মাদরাসার এমপিও শিটগুলো সরাসরি এনটিআরসিএর কাছে যাবে। প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও শিট পাশাপাশি নিলেই কর্মকর্তারা বুঝতে পারবেন কোন কোন পদ খালি আছে, আর কতজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদটি এমপিওভুক্ত পদ কি-না, এন্ট্রি লেভেলের কি-না, কোন বিষয়ের পদ সে ধারণা এনটিআরসিএ এমপিও শিট দেখেই পাবে।
তিনি আরো বলেন, এনটিআরসিএ স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা দেখে শিক্ষক পদে প্রার্থীদের নির্বাচন করে। পরে যাচাই বাছাই করে দেখা যায়, যে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ওই পদের জন্য যোগ্য নন। তখন নির্বাচন করা হলেও প্রার্থী আর যোগদান করতে পারেন না, পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যন্ত পদটি শূন্য থাকে। তাই নীতিমালা মেনে প্রার্থী নির্বাচন দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে প্রার্থী নির্বাচনের পর যাচাই বাদ পড়ে পদটি আর শূন্য না থাকে।
সার্বিক বিষয়ে এনটিআরসিএর সদস্য (অর্থ-প্রশাসন) এস এম মাসুদুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের ভোগান্তি ও জটিলতা কমাতে যদি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নির্দেশ দেয় তাহলে আমরা (এনটিআরসিএ) অবশ্যই তা (এপিআই) বাস্তবায়ন করবো।
তবে সভায় অংশ নেয়া অপর এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যে জাল হয় তা পুরোপুরি করা হয় তথ্য দিয়ে। গত কয়েকবছরে সনদ যাচাই করে আমরা যেটা বুঝতে পেরেছি, প্রার্থীরা একই নামের প্রার্থী খুঁজে বের তার রোল নম্বর সংগ্রহ করে জাল সনদ তৈরি করেন। নিবন্ধিত প্রার্থীদের নাম ও সেই সঙ্গে ওই প্রার্থী রোল নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য যদি কোনোভাবে ফাঁস হয়ে যায় তাহলে সনদ জাল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এতে প্রার্থীরা হুবহু জাল সনদ তৈরি করবেন এবং সেটি যে জাল তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সরসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষক শূন্য পদের চাহিদা সংগ্রহ করে এনটিআরসিএ। এজন্য প্রায় ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন হয়। আবার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শূন্যপদের তথ্য সঠিক আছে কি-না তা যাচাই করতে প্রয়োজন হয় ৩০ দিন বা তারও বেশি সময়। অপরদিকে বর্তমানে শূন্য পদের প্রেক্ষিতে গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধিত প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করে তার সনদ যাচাই করা হয়। যাচাইয়ে দেখা যায়, অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হলেও তারা ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান ও এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য নন। স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিনটি আলাদা এমপিও নীতিমালায় এন্ট্রি লেভেলের একই ধরনের শিক্ষক পদে নিয়োগের যোগ্যতায় সামঞ্জস্যতা না থাকায় এ জটিলতা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।