নিয়ম অনুযায়ী, নবম ও দশম শ্রেণির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীরা ট্যাব দেওয়া কথা থাকলেও তারা সেটা পায়নি বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
নাটোরে গুরুদাসপুর উপজেলার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ট্যাব বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় এক সচেতন ব্যক্তি প্রতিবাদ করলে নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ক্ষুব্ধ বলেছেন, “আমাদের চুরি করার ক্ষমতা আছে তাই চুরি করেছি, তাতে আপনার কি? আমরা ট্যাব নিয়ে এসেছি, আমাদের ছেলেমেয়েদের তা দিয়েছি, আপনি এখানে ঝামেলা করার কে?”
শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ফরিদ মণ্ডল ও সহকারী শিক্ষক আকরামুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে উঠেছে।
উপজেলার নাজিরপুর এলাকার মকুল হোসেন বিদ্যালয়ে এসে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ছয়টি ট্যাব মেধাবীদের না দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ছেলেমেয়েদের মাঝে বিতরণের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানাতে বিদ্যালয়ে হাজির হন মকুল হোসেন। এরপর কথোপকথনের একপর্যায়ে সহকারী শিক্ষক আকরামুল তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
নিয়ম অনুযায়ী, নবম ও দশম শ্রেণির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীর ট্যাব পাওয়ার কথা। কিন্তু তা না মেনে ওই প্রধান শিক্ষকের ভাতিজি, সহকারী শিক্ষকের ছেলেমেয়েদের দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জানায়, সম্প্রতি জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ গুরুদাসপুর উপজেলার ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৭৪টি ট্যাব বিতরণ করা হয়। ট্যাব বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত তালিকা অনুসারে ট্যাব বিতরণ করা হয়।
যদিও নাজিরপুরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান হোসেনের বাবা ফরহাদ আলী করে বলেন, “আমার ছেলে অত্যন্ত মেধাবী। দশম শ্রেণীতে তার রোল ১। কিন্তু তাকে ট্যাব দেওয়া হয়নি।
“আমি জানার পর প্রতিবাদ করতে গেলে পরে দেবে বলে জানায় শিক্ষকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা এমন অনিয়ম করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? তাই আমি এ অনিয়মের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ মণ্ডল বলেন, “ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যাওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বুঝতে পারিনি। যারা পেয়েছে তাদের কাছ থেকে ট্যাব ফেরত নিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করব।”
ট্যাব বিতরণের অনিয়মের কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, “ট্যাবগুলো ফেরত এনে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছি।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আকতার মুঠোফোনে বলেন, “ট্যাব বিতরণে অনিয়ম সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমি নতুন যোগদান করায় ভালোভাবে তালিকাগুলো তদন্ত করতে পারিনি। অতি দ্রুত প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ট্যাবগুলো প্রদান করা হবে এবং এই অনিয়মের ব্যাখ্যা প্রধান শিক্ষকের কাছে চাওয়া হবে।”
ভিডিওর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “ট্যাব বিতরণে অনিয়ম ও সহকারী শিক্ষকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”