কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমির আলী চৌধুরী একজন আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ মানুষ ও অভিভাবক। আমার সরাসরি শিক্ষকদের মধ্যে তিনি এখন বয়োজ্যেষ্ঠতম। আমি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলাম।
তিনি তখন বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। গত ৪৬ বছর আমাদের আর দেখা হয়নি। ২১ আগস্ট সকাল দশটায় স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। এক ঘণ্টা ছিলাম। নানা বিষয়ে কথা হলো। স্যারের সঙ্গে ছবি তুললাম। আমার লেখা দুটো বই স্যারকে উপহার দিলাম। বিদায়ের সময় একজন ছাত্র একজন শিক্ষকের কাছ থেকে যেভাবে বিদায় নেওয়ার কথা, সেভাবে বিদায় নিলাম। সঙ্গে আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের সহপাঠী মোতাহার হোসেন জামালও ছিলেন।
আমির আলী চৌধুরী স্যার এখন কুমিল্লা শহরের সবচেয়ে সম্মানিত ও বয়োজ্যেষ্ঠ স্যোসাল এলিট। এখন স্যারের বয়স ৮৩-প্লাস। তিনি এখনো বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন। সবাই তাঁকে সম্মান করেন।
একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে পুরো শহরে দলমত নির্বিশেষে তিনি সকলের কাছে শ্রদ্ধাস্পদ।কেউ কাউকে এমনি এমনি শ্রদ্ধা করে না। শ্রদ্ধা অর্জন করতে হয়। শ্রদ্ধা অর্জনের প্রধান উৎস হলো স্বীয় কর্ম ও চলনবলন। বনেদি পরিবারের সন্তান আমীর আলী স্যার নিজের কর্ম ও আচরণ দিয়ে সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন। তিনি তার ছাত্র -ছাত্রীদের কখনো পদ-পদবি এবং মোটা বেতনের লোভ দেখাননি। তিনি তার শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতেন।তাই এখনো তার ছাত্ররা তাকে পায়ে ধরে সালাম করে, তার দোয়া নিতে যায়।
স্যারের সঙ্গে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল ২১ আগস্ট সকাল দশটায়।ঠিক সময়ে তার বাসায় ঢুকি। এক মিনিট আগেও নয় ,পরেও নয়। বিষয়টি তাঁর নজর এড়ায়নি। শিক্ষক তাঁর ৬৫ বছর বয়স্ক ছাত্রকে এজন্য প্রশংসা করতেও ভোলেননি। জানতে চেয়েছিলেন, আমি সব সময় এ রকম সময়নিষ্ঠ কি না? আমার জবাব ছিল, ‘স্যার শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই আমার শিক্ষকরা ছিলেন সময়নিষ্ঠ।আমি সেটা ভুলিনি।’
দোয়া করবেন স্যার, ভালো থাকবেন। আবার যাতে নিজের লেখা বই উপহার দিতে আপনার সাক্ষাৎ পাই।
আবারও বিনম্র শ্রদ্ধা স্যার।
লেখক: সাবেক সচিব।