দৈনিক শিক্ষাডটকম, নাটোর : নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ২ পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার বিকেলে নাটোর শহরের ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষকের নাম বাদল উদ্দিন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদল জানান, ‘রোববার স্কুল ছুটির পর মোটরসাইকেলে নাটোর শহরে বাসায় ফেরার পথে বিকেলে ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় পুলিশ সদস্য সজিব খান ও কনস্টেবল আসাদুজ্জামান এবং পুলিশের স্থানীয় সোর্স বিদ্যুৎ আমার পথরোধ করে এলোপাতাড়ি মারপিট করে।’
তিনি বলেন, ‘আঘাত সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী কওমি মাদরাসায় আশ্রয় নিলে মাদরাসার শিক্ষকরা এগিয়ে এলে পুলিশের সোর্স বিদ্যুৎ পালিয়ে যায়। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশের দুই সদস্য আমাকে বলে ‘তোর কাছে মাদক আছে’। পরে তারা তল্লাশির এক পর্যায়ে তাদের কাছে থাকা দুইটা কাগজ দেখিয়ে বলে এই যে দুই পুরিয়া হিরোইন পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এরপর দুই পুলিশ সদস্য জোরপূর্বক আমাকে হাতকড়া পরিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে বলে ২ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। আমার সঙ্গে টাকা না থাকায় তারা বিকাশ নম্বর দিয়ে পাঠাতে বলে এবং আমার পকেটে থাকা ৪০০ টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরে তারা বেশ কয়েকবার টাকার জন্য ফোনকল করেছে কিন্তু আমি টাকা দেইনি। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাটোর সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হই।’
শিক্ষক বাদল উদ্দিন আরও জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিনের সঙ্গে বিদ্যালয়ের কিছু বিষয় নিয়ে তার দ্বন্দ্ব আছে। সেকারণে ওই প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এই বিষয়ে পুলিশ কনস্টেবল আসাদুজ্জামান জানান, ‘একটা তথ্য পেয়ে আমরা এসে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলাম। এরমধ্যেই বিদ্যুৎ এসে মারধর শুরু করে। ওই সময় ওই শিক্ষকের কাছ থেকে কাগজ বের করে বললো ২ পুরিয়া হিরোইন পাওয়া গেছে। আসলে কাগজ নাকি কোন মাদক ছিল তা জানি না। পরে কিছুদূর নিয়ে যাওয়ার পর আরও দুইজন শিক্ষক বাদলকে ছেড়ে দিতে বললে আমরা ছেড়ে দিয়ে চলে আসি। আর ওই কাগজ ওসি স্যারের হাতে দিয়ে দিয়েছি।’
রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন জানান, বাদলের কাছে মাদক পাওয়া গেছে এমন খবর শুনেছেন। এ বিষয়ে আর কোন খোঁজ নেননি তিনি।
তার বিরুদ্ধে বাদলের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদল কেন তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছেন সেটা তিনি জানেন না। তবে এই অভিযোগ সত্য নয় বলে তার দাবি।
বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নান্নু খান জানান, ‘মাদকের তথ্য পেয়ে ২ পুলিশ কনস্টেবল একজন শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলো। এ সময় সোর্স ওই শিক্ষককে মারধর করতে থাকে। পরে তার কাছ থেকে ২ পুরিয়া হেরোইন পাওয়া গেছে বলে দাবি ওই দুই কনস্টেবলের। পরে আসামিকে ছেড়ে দিয়ে আসে। দুই পুলিশ সদস্য কাউকে না জানিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে এসব ঘটিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা কেন সেখানে গেল এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সজিব থানায় ১টা কাগজ জমা দিয়েছে। তাতে হেরোইন আছে কিনা সেসব পরীক্ষা করে জানা যাবে।’