অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোগান্তি ঠেকাতে প্রাথমিকে অনলাইন বদলি প্রক্রিয়া চালু করে সরকার। কিন্তু সরকারের এক সংসদ সদস্যের (এমপি) বাধায় সেটি কার্যকর করতে পারেননি কুমিল্লার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। স্থানীয় এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহারের আপত্তির কারণে জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি হওয়া ৩২ শিক্ষককে কোনোভাবেই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করাতে পারেননি তিনি। যার কারণে বলি হলেন মো. আব্দুল মান্নান নামের এই শিক্ষা কর্মকর্তা। বারবার তাগাদা দিয়েও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে বদলি হওয়া শিক্ষকদের যোগদান করাতে না পারায় তাকে বান্দরবানে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হক শিকদারকে বদলি করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না ভুক্তভোগী শিক্ষা কর্মকর্তা। বলছেন, যেখানে বদলি করা হয়েছে সেখানে কাজ করবেন। আর অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দপ্তর ও এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহারের কাছে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন বদলি হওয়া ৩২ সহকারী শিক্ষক। সেখান থেকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে ফিরছেন বলেও অভিযোগ কয়েকজন ভুক্তভোগীর।
ঈদের আগেও যোগ দিতে না পেরে হতাশা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। বেতন-ভাতা বন্ধ হওয়ায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে জেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, আমরা নির্দেশনা দিয়েছি ওই শিক্ষকদের যোগদান করাতে। যদি না করানো হয় তাহলে আমরা অধিদপ্তরকে জানাবো। গত ২৪শে মে ‘নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি ৩১ শিক্ষক/ এমপি’র বাধা, অসহায় শিক্ষা কর্মকর্তা’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করে । যেখানে জেলা শিক্ষা অফিসার নিজের অসহায়ত্বের কথা জানান। আর স্থানীয় এমপি বাহাউদ্দিন বাহারও নিজের যুক্তি উপস্থাপন করে বক্তব্য দেন। বারবার তাগাদা দিয়েও নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৪ই জুন কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মান্নানকে বান্দরবানে বদলি করে। আর বান্দরবানের জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সফিউল আলমকে কুমিল্লায় বদলি করা হয়েছে। যিনি এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি। আর জেলা শিক্ষা অফিসারকে বদলির একদিন আগে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জিয়াউল হক শিকদারকে বদলি করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়।
এই দুই কর্মকর্তার বদলির পরও নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, এমপি’র কাছে কয়েকবার গিয়েছি- তিনি আমাদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছেন তার লোকবল দিয়ে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এ বিষয়ে যেন কেউ তার কাছে কথা বলতে না যায়। এদিকে বদলি নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নন বান্দরবানে বদলি হওয়া জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মান্নান।
তিনি বলেন, আমার ব্যর্থতা আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে কাজ করাতে পারিনি। এ জন্য আমাকে বান্দরবানে বদলি করা হয়েছে। এটা বড় স্যারদের (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) সিদ্ধান্ত। আমি তো ছোট কাজ করি কোনো কমেন্ট করতে পারি না। আল্লাহ যেখানে রিজিক রেখেছেন সেখানেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলাদেশেই তো আছি, রাখাইনে তো আর বদলি করেনি।
স্যাররা চাপ দিচ্ছেন এসব শিক্ষককে জয়েন করাতে। আবার এমপি যে যুক্তি দেখিয়ে নিয়োগ প্রদানে বাধা দিয়েছেন সেটিও যুক্তিসঙ্গত। আমাদের তো কিছু করার নেই।
এদিকে বদলি হওয়া শিক্ষকদের যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার কাজী মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাজ। তিনি বদলি হওয়া শিক্ষকদের নিয়োগ করাবেন। আমরা এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। যদি তিনি না করান তাহলে আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।