প্রাথমিকে নানা সমস্যা ঝুলিয়ে রাখার প্রবণতা দীর্ঘ সময়ের। এতে সংশ্লিষ্টরা যে কী আনন্দ পায়, জানি না। অনেকটা ব্যাঙের ওপর শিশুদের ঢিল মারার মতো। শিশুদের কাছে এই ঢিল নিক্ষেপ নিছক খেলা। এর মাঝে ব্যাঙের কষ্ট, আহত ও নিহত হওয়ার বোধশক্তিটুকু তাদের মাঝে খুঁজে পাওয়ার কথা নয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিশু শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রণালয়ে প্রাজ্ঞ ও মেধাবীদের সাধারণত নিয়োগ দান করে থাকেন। অথচ বিগত সময় থেকে দেখে আসছি, কেন যে তারা এ মন্ত্রণালয়ে আসার পর শিশুদের মত অবুঝ হয়ে পড়েন! কেন যে তাঁরা প্রাথমিকে এসে সময়ক্ষেপণের মাত্রাটি অব্যাহত রেখে চলেছেন, সেটা বোধগম্য নয়।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ২-৩ বা ৪ বছর পর পর হয়ে থাকে। এই দীর্ঘ সময়ে শিক্ষক শূন্যতার কারণে শিশু শিক্ষা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এবারে প্রায় ৩ বছর পর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এ সময়ক্ষেপণ পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কত শিক্ষকের পদ যে শূন্য হবে, তা জানা নেই।
বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা যে নাজুক হয়ে পড়ে, এ বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। দূর করতে হবে শিক্ষক সংকট। শুধু শিক্ষক নিয়োগ নয়, বদলিও প্রায় ৩ বছর ঝুলে আছে। এ কারণে বহু শিক্ষক এ পেশা থেকে বিদায় হয়েছেন।
কেউ কেউ চিকিৎসা ছুটিসহ নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ের কাজ থেকে বিরত রয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবশেষে বদলি সময়ক্ষেপণ করতে করতে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে বদলির আবেদন করা শুরু হয়। এতে বদলির আবেদনকারীরা অনেকটা আশান্বিত হয়েছিলেন। তাদের এ আশা অনেকটা অনিশ্চিত। এ আবেদনের বদলি শুরু হবে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি-মার্চে। প্রথমে নিয়োগ দেয়া হবে ৪৫ হাজার শিক্ষক। এতে বদলির আবেদনকৃত কাঙ্ক্ষিত পদ প্রায়ই নিয়োগ দিয়ে পূর্ণ করা হবে। এতে শিক্ষক বদলির হাঁকডাক শুধু অমাবশ্যার অন্ধকারের মতো আলোর মুখ দেখবে না, নিয়োগ প্রক্রিয়ার আগে বদলির কার্যক্রম সমাধান হলে শিক্ষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত পছন্দের স্কুলে সচ্ছন্দে শিক্ষকতা করতে পারবেন। শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়ায় গিট্টু লাগানো প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
৪ জন শিক্ষক বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি করার আবেদন করা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। এটা তাদের অধিকারের পরিপন্থি ও অমানবিক। নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রতিস্থাপন করে বদলির আদেশ দেয়া করা হলে বিদ্যালয়ের পাঠদান ও স্বাভাবিক কাজ কর্ম ব্যাহত হতে পারে না। এ নিষ্ঠুর অমানবিক শর্ত রহিত করা প্রয়োজন।
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি আছে, এ কথা তারা ভুলতে বসেছে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পদোন্নতি ঝুলে আছে। চলতি দায়িত্বের বহু প্রধান শিক্ষক অবসরে বা কবরে গিয়ে মাংস পচে গলে মাটির সাথে মিশে গেছে। প্রাথমিকের নানা সমস্যা ঝুলিয়ে রেখে বঙ্গবন্ধু ও তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ঝুলিয়ে রাখা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে হবে।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ এবং সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম