দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার ব্যাপারে আলোচনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
আজ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির তৃতীয় সভা সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদ।
বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মো. আবদুল মজিদ, অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, আহমদ হোসেন, বিপ্লব হাসান, আবদুল মালেক সরকার, মো. আজিজুল ইসলাম।
এ ছাড়া সভায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর-কল্যাণের টাকা পাওয়ার কার্যক্রম সহজ করার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। এর বাইরেও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রমের ওপর বিশদ আলোচনা হয়।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মন্ত্রীর প্রস্তাবের বিষয়টি কমিটিতে সুপারিশ আকারে আনা হয়। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কোনো প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। ওই সুপারিশের অগ্রগতি প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে—বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট কমিটিতে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে, কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেয়া হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সেখানে কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন বলেছেন— এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরের পর পেনশনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি অনেকেই পেনশনের অর্থ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আরেক সদস্য আহমদ হোসেন বলেন, যেহেতু এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই শিক্ষকদের পেনশন এককালীন পরিশোধ না করে দুটো কিস্তিতে প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের পেনশন এককালীন পরিশোধ না করে সরকারি কর্মচারীদের অর্ধেক এককালীন এবং বাকিটা মাসিক পেনশন হিসেবে দেয়া যায় কি না, তা ভেবে দেখার অনুরোধ করেন।
বৈঠকে অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদা এবং স্থায়ী আমানতের সুদ মিলে বছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা দাঁড়ায়। আর বর্তমানে সুদের হার বাড়ায় এ খাত থেকে বছরে ৫০-৫৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।
কিন্তু শিক্ষকদের দাবিকৃত অবসর ভাতা পরিশোধে প্রয়োজন ৪৪৪ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারের অনুদান বাড়ানোর পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ২ কোটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা, পাবলিক পরীক্ষার সময় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সরকারের তরফ থেকে ইতোমধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নবনিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একটি প্রযোজ্য হবে বলে সরকারের এক আদেশে বলা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেছেন।