শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মূলে রয়েছেন শিক্ষকরাই।’ শিক্ষকতা মহান পেশা। আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত পেশাটি অত্যন্ত গৌরবের ও সম্মানের। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয়ভাবে এ পেশার মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি ১ লাখ ৩৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। একই ধারাবাহিকতায় তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আর কোনো সরকার প্রধান এতো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেননি। বরং মর্যাদা হরণ করে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
 
বঙ্গবন্ধু তাঁর শিক্ষককে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে, উপস্থিত সকলকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তোরা দেখে যা আমার শিক্ষককে।’ অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা এ প্রজন্মের সকলেই প্রত্যক্ষ করেছেন। শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে এক অসাধারণ শিক্ষা কমিশন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ওই শিক্ষা কমিশন বাস্তবায়ন, শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষকের মর্যাদা উন্নত দেশের মতো হতো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে প্রধান করে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন ও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষানীতিকে ভিত্তি করে নতুন একটি শিক্ষানীতি তৈরি করার জন্য কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকারের চাওয়া অনুযায়ী কমিটি প্রতিবেদনটি পেশ করে। সেটি কিছুটা সংশোধিত হয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদে শিক্ষানীতি হিসেবে গৃহীত হয়। বর্তমান শিক্ষানীতি ১০ বছরের অধিক সময় ধরে বহাল রয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় শিক্ষানীতি নতুনভাবে করতে পারে। 
 
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে শিক্ষানীতি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তেমন কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষানীতির কৌশলগুলো দীর্ঘসময় কার্যকর না করার কোনো কারণ বোধগম্য নয়। শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিকে শিক্ষার স্তর ৮ম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার কথা। সে সুপারিশ লক্ষ্য রেখে প্রতি উপজেলায় ২-১টি প্রাইমারি স্কুল ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সে উদ্যোগ একেবারে বন্ধ রাখা হয়েছে।
 
বাজেটে জাতীয় শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে অর্থ বরাদ্দের কোনো ইচ্ছে স্বপ্নেও দৃশ্যমান হচ্ছে না। যে গুটি কয়েক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি খোলা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আচরণ অনেকটা বিমাতাসুলভ। ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষক, ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় পরিচালনার খরচের টাকা, পরিদর্শনসহ সব কার্যক্রমের প্রতি উদাসীন। প্রাথমিকের কর্মকর্তাদের ভাব দেখে মনে হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে ৮ম শ্রেণির বিদ্যালয়গুলোকে অকার্যকর করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। ‘ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার’- এর মতো প্রাথমিকের ৮ম শ্রেণির বিদ্যালয়গুলো। তবে, ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো উল্লেখযোগ্য ফলাফলের দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে।  
 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে কতিপয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী  বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আদর্শ, নীতি বাস্তবায়নের পরিপন্থী কর্মকর্তা অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার এদেশে তৃণমূলের মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন রুখে দিতে নানা ছলচাতুরি বাহানার আশ্রয় নিচ্ছেন। বর্তমান শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত  গরীব, মেহনতি মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হবে। যা বঙ্গবন্ধু  ও জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আদর্শ ও চাওয়া। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ৮ম শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগও দিয়েছিলেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা এত ছোট শিশুর মতো যে, তারা পরীক্ষা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে উদাসীনতা, বিশেষ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর করার সব কার্যক্রমে নিরবতা বর্তমানে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা তথা তৃণমূলের গরীব, মেহনতি মানুষের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। 
 
প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের নানা বৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ রেখে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষকরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে।’ এ প্রতিপাদ্য বাস্তবায়ন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
 
এ দেশের গরীব, মেহনতি মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকারের চ্যালেঞ্জ দূর হোক, এটাই প্রত্যাশা। 
 
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ  ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষাডটকম। 

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053949356079102