দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাঙামাটি : রাঙামাটি সদরের মগবান ইউনিয়নে রইন্যাছড়ি গ্রামের লালমোহন কার্বারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুব্রত সেন গুপ্তের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়াসহ যৌন নিপীড়নের আরও অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগটি সামনে চলে আসে। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক। আর তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের বিভিন্ন সময়ে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়াসহ বিভিন্নভাবে যৌন নিপীড়ন করতো অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত সেনগুপ্ত। তিনি শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় কাউকে না বলার জন্য পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখাতো। তবে হঠাৎ করে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীরা বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়ার পর বিষয়টি সামনে চলে আসে।
এ ঘটনায় সহকারী শিক্ষকের বিচারের দাবি জানিয়ে অভিভাবকরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী। অভিযুক্ত শিক্ষক ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪০ জন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্লাসে বিভিন্ন সময় বুকে, গলায় এবং কোমরে চাপ দেয় অভিযুক্ত সুব্রত সেনগুপ্ত। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ভয়-ভীতি দেখাতো। এমনকি পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিবে বলেও হুশিয়ারি করতেন। ভয়ে শিক্ষার্থীরা কাউকে কিছু জানায়নি।
ভিকটিমের অভিভাবকরা জানায়, মেয়েদের স্কুলে যেতে বললে অনেকদিন ধরে তারা স্কুলে যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না বিষয়টি জানার চেষ্টার করার পরই বিষয়টি সামনে আসে। স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুব্রত সেনগুপ্ত মেয়ের শরীরর বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। সেই ভয়ে মেয়েরা স্কুলে যেতে চায় না।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমেনি দেওয়ান বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে, সহকারী শিক্ষক সুব্রত সেনগুপ্ত ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
রাঙামাটি মগবান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পুষ্প রঞ্জন চাকমা জানান, মহিলা মেম্বার ও পুরুষ মেম্বার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। যেহেতু তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে, যদি ওই শিক্ষকের দোষ পাওয়া যায়, তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে স্কুল থেকে সরিয়ে নিলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কমল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, সহকারী শিক্ষক সুব্রত সেনগুপ্ত স্কুলে যোগদান করার পর থেকে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের শরীরের বিভিন্ন জয়গায় হাত দিতেন তিনি। আমরা বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত সেনগুপ্ত এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষিকেশ শীল জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।