শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো!

সংবাদ ভাষ্য |

সংবাদ ভাষ্য  : আজ থেকে কয়েকদিন শিক্ষা ভবনে দেখা মেলবে শিক্ষা ক্যাডারে আপাত বোল পাল্টানো বা ঘাপটি মেরে থাকা ‘জিয়া পরিষদ’ সদস্যদের। তারা দলে দলে আসবেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে সংরক্ষিত শিক্ষা ক্যাডারের পিডিএস-এ গোঁজামিল দেওয়া তথ্য কারেকশন করার জন্য। আরো আসবেন সরকারি কলেজের ডিডি-এডির দপ্তরে থাকা অভিযোগনামার কপি গায়েব করাতে। সর্বশেষ এমন বড় একটা সুযোগ পেয়েছিলেন জিয়া পরিষদের আরেক সদস্য মহাপরিচালক পদে থাকাকালে। সেটা ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘণ করে সময় বিশেষে শেখ লুকানো অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামানের সময়। রেওয়াজ ভঙ্গ করে শেষ কর্মদিবসে শতশত বদলি ও শিক্ষা ক্যাডারে জিয়া পরিষদ সদস্যদের গোঁজামিল দেওয়া পিডিএস ঠিক করে দেওয়া, বিদেশে অবস্থানরতদের ফাইল লুকানো, পিএইচডি/শিক্ষা ছুটির আবেদন ‍ফরোয়ার্ডসহ নানা অপকর্ম করেছিলেন মর্মে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি দৈনিক জনকন্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। 

ছিয়ানব্বইয়ের ২৩ জুন থেকে হিসেব ধরলে এবারই প্রথম খাঁটি আওয়ামী লীগার দুজন পেশাদার রাজনীতিবিদকে যথাক্রমে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া গেছে। এতে যারপরনাই খুশী মুজিববাদী ছাত্রলীগারদের মধ্য থেকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেয়ে চাকরিজীবনের বেশিরভাগ সময় কোনঠাসা থাকারা। তাদেরই একজন অধ্যাপক ঈদের দিনে ফোন করে বলতে থাকলেন এবার ষোলোকলা হলো। জানতে চাইলাম সেটা কী। একটু খোলাসা করেন। এরপর তিনি বলতে থাকলেন, এবার জিয়া পরিষদ সদস্যদের বদলি, পদায়ন, কর্মস্থল, শিক্ষাছূটি, অনুমোদনহীন বিদেশে অবস্থানসহ নানা তথ্য ও কাগজের সব ঘাটতি পূরণ করে নেবে।

একটু খোলাসা করে বলার অনুরোধ করলে তিনি শুরু করলেন এভাবে; ধরুন শিশির স্যারের কথা। শিশির স্যার নামে ঢাকা অফিসার্স ক্লাব ও হাওয়া ভবনসংশ্লিষ্টরা সবাই চেনেন। শিক্ষা ক্যাডারের বিএনপি-জামাতপন্থী ও মধ্যপন্থীরা জানেন হাওয়া ভবনের দাপটকালে শিক্ষা বিভাগের সবকিছুতে শিশির স্যারের হাত থাকতো। ১৪শ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরির শুরুতে তার নাম কাজী মো. আবু কাইয়ুম। আইডি নং ১০৩৫৭। ইংরেজির অধ্যাপক। ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার বিএনপির মন্ত্রীদের আত্মীয়দের সঙ্গে শিশিরও পলাতক বা গা ঢাকা দিয়েছিলেন। কর্মস্থলে ছিলো না। সেই থেকে শিশির স্যার কোথায় চাকরি করেন বা করেছেন তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য শিক্ষা ভবনের প্রশাসন শাখা/কলেজ শাখা থেকে পাওয়া যায় না। তবে, এই সময়ের মধ্যে  ঠিকই পদোন্নতি পেয়েছেন জিয়া পরিষদের নেতা শিশির। কাগজপত্রও অনেকখানি ঠিক করিয়ে ফেলেছেন ঘাপটি মেরে থাকা শিষ্যদের দিয়ে। তাকে কেউ ঘাঁটায় না। কারণ, ক্যাডারের সবাই জানেন তারেক জিয়া  কখনো প্রধানমন্ত্রী হলে শিশির তার পিএস হবেন! শিক্ষা ছাড়িয়ে এডমিন ক্যাডারেও এই খবর চাউর বহু বছর ধরে। তাই শিশিরের দাপট ও কদর অফিসার্স ক্লাবের vote-monger নেতাসহ অনেকের কাছে ছিলো এবং আছে।

মুজিবাদী ছাত্রলীগার অধ্যাপক আরো বলেন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে শিক্ষা ক্যাডারে একটা জুজু চালু করেছেন এই শিশির। চাকরিজীবনের শুরু থেকেই ক্যাডারে সংখ্যালঘু ও কোনঠাসা মুজিবাদী ছাত্রলীগার শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের সেবার বলা হয়েছিলো ‘ক্ষমতায় এলে দেখে নেওয়া হবে’। যেই কথা সেই কাজ। ২০০১ এর ১ অক্টোবরের সেই নির্বাচনের পর নির্যাতনের খবর ক্যাডারের সবার জানা। তারেকের ডিজাইন অনুযায়ী নবম সংসদের জন্য ঘোষিত ২০০৭ এর ২২ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো সেই জুজু। এবারও জিয়া পরিষদের নেতা শিশির আলোচনায়। ওয়ান ইলেভেনে সেই নির্বাচন ভঙ্ডুল ও পিছিয়ে ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সেই ইলেকশনের আগেও জুজু ছিলো। পাঁচ বছর পর আসে দশম সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর অথবা ২০১৪ এর জানুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ বলাবলি হচ্ছিলো। তখনো তালিকা তৈরি করেছিলো জিয়া পরিষদ সদস্যরা। শিক্ষা ভবন থেকে কোন কোন কর্মকর্তাকে পিটিয়ে বের করা হবে। কাকে বরখাস্ত কাকে ওএসডি কাকে বছরের পর বছর ভুরুঙ্গামারি পাঠানো হবে ইত্যাদি।   

২০১৩ এর আগস্টের কথা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নির্বাচনে বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের শ্যালিকা তৎকালীন ঢাকা কলেজের অধ্যাপক নাছরিন বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন। সমিতিতে তিনিসহ বেশিরভাগ পদে বিজয়ী বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা। শিশিরের প্রযোজনায় ও নাছরিনের নেতৃত্বে শিক্ষা ক্যাডারে জিয়া পরিষদের  তিন শতাধিক সদস্য রাতের বেলায় খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অফিসে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। গোপন মিটিংও করেন। গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। সবাইকে শোকজ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলেও ‘সামনে দশম সংসদ নির্বাচনে কে বা কারা ক্ষমতায় আসে’ সেই জুজুতে শোকজ করা হয়নি বলেই চাউর। উল্টো ওই প্রতিবেদন লেখার জন্য একজন সাংবাদিককে হুমকি দেয়া হয়েছিলো।

ক্ষুব্ধ সাবেক ছাত্রলীগার অধ্যাপক আরো বলে চলেন। এবারে তিনি মনে করিয়ে দেন,  মাত্র কয়েকমাস আগের কথা। মানে গত বছরের কথা।  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারো জিয়া পরিষদ সদস্যদের সেই জুজু। পিটার হাস ডাকাডাকি করেছে, চ্যানেল আইতে তারেক জিয়ার শিক্ষা ও আদমব্যবসার পার্টনার ক্যমবিয়ানের বসারের অর্থায়ন ও টকশো প্রযোজক জিল্লুর রহমানের উদ্যোগে চলতে থাকে সরকার বদলের জুজুর ভয়। এতে ঘি ঢালেন শিক্ষা ক্যাডারের জিয়া পরিষদ সদস্যরা। শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে বড় পদে থাকা অনেকেই নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা শুরু করেন। শেখ রাসেলের জন্মদিনে শিক্ষা ক্যাডারের বক্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। দুএকজনকে পাওয়া গেলেও তারা দুএক মিনিটেই বক্তব্য শেষ করেন। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিএনপি-জামাতপন্থী গণ ও প্রচারমাধ্যমকর্মীরা বেপরোয়া। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি প্রায় প্রতিদিন। এমন সময়ে শিক্ষা ক্যাডারের জিয়ার পরিষদ সদস্যদের পরিকল্পনায় কঠোর আন্দোলনে নামে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা।  

গত বছর ৩ অক্টোবর প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা দাবি আদায়ে পালন করছেন কর্মবিরতি’ শিরোনামের সংবাদের দুই প্যারা এমন : ‘আন্দোলনকারী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী। তাঁর কক্ষে গিয়ে দেখা গেল শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বসে আছেন। তাঁদের মধ্যে সমিতির মহাসচিব মো. শওকত হোসেন মোল্যাসহ আরও কয়েকজন নেতা ছিলেন।

জানতে চাইলে শাহেদুল খবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, সারা দেশেই এ কর্মবিরতি চলছে। যদি ঘোষিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হয়, তাহলে পরবর্তী সময় আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন হওয়ার পথে। যথাযথ কতর্পক্ষকেও এসব সমস্যা জানানো হয়েছে।

শিক্ষকসংকটের কথা বলতে গিয়ে শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, মানসম্মত শিক্ষা চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষকের এ অভাব দীর্ঘ বছর ধরে লালন করা হচ্ছে, যাতে এ অভাব থেকে যায়। দাবি আদায়ে ধাপে ধাপে এ কর্মসূচি চলবে বলে জানান তিনি।”

মুজিবাদী ছাত্রলীগার অধ্যাপক বলেন, পিটার হাসের ছোটাছুটিকালে শাহেদুল খবিরের বক্তব্য ক্লিয়ার এন্ড লাউড,  “তাঁর অভিযোগ, শিক্ষকের এ অভাব দীর্ঘ বছর ধরে লালন করা হচ্ছে, যাতে এ অভাব থেকে যায়।”  ২০০৯ থেকে ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তাহলে শাহেদ বর্ণিত “শিক্ষকের এ অভাব দীর্ঘ বছর ধরে লালন করা হচ্ছে, যাতে এ অভাব থেকে যায়।”    

মুজিববাদী ছাত্রলীগার সেই অধ্যাপক শেষ করেন এই বলে, ‘৯ এপ্রিলের পর নিয়মিত মহাপরিচালক নেই। নেহাল আহমেদ পিআরএল-এ। ১৫ এপ্রিল ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস। রুটিন দায়িত্বের প্রথম সুযোগ। বিকেলেই আর্থিক ক্ষমতা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন শাহেদুল খবির। এখন গভীর রাত অব্দি চলবে শিক্ষা অধিদপ্তরেরর সরকারি কলেজ ও প্রশাসন শাখার কাজ! শিক্ষা ক্যাডারের বিএনপি-জামাতপন্থীরা অফিসার্স ক্লাব থেকে হাঁটতে হাঁটতে শিক্ষা ভবনে গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় অকাজটা সেরে আসবেন। আর নামে-বেনামে প্রথম আলোর শিক্ষা পাতার নিয়মিত লেখক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের জিয়া পরিষদ সদস্যরা বগলদাবা করে প্রথম আলোর কপি নিয়ে অফিসার্স ক্লাবে যাবেন। প্রথম আলোর প্লাটফর্ম ব্যবহার করে, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সরকারকে কতটা বেকায়দায় ফেলা গেলো, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন ‘সরকারি কলেজগুলোকে আঞ্চলিক বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে দেয়া’  কতটা ঠেকানো গেলো! অনুশাসন বাস্তবায়ন ঠেকাতে নামে-বেনামে নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম, ইত্তেফাক, মানবজমিন, যুগান্তরসহ কোন কোন পত্রিকায় কতগুলো লেখা ছাপাতে পারলেন জিয়া পরিষদ সদস্যরা তার হিসেবে কষবেন কফিতে চুমুক দিতে দিতে।  

আর নোট-গাইড কোম্পানিতে চুক্তিতে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের জিয়া পরিষদ সদস্যরা ঈদ ও পহেলা বৈশাখের বখশিস নিয়ে হিসেব কষবেন। নতুন শিক্ষাক্রম পুরোটা বাস্তবায়ন হলে নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা কতটা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন, সেই ক্ষতির কত অংশ নিজেদের আয়ের ওপর পড়বে ইত্যাদি।  


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0020790100097656