শিক্ষা ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণ

দৈনিকশিক্ষাডটকম, কাজী জাহিদ হাসান |

ব্যাংকগুলোর শিক্ষা খাতে ঋণ দেয়ার আগ্রহ না থাকলেও গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিক্ষা ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ ধরনের ঋণের চাহিদা বাড়ছে। 

সাধারণত ব্যাংকগুলো দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীকে ৫০ হাজার থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত শিক্ষাঋণ দেয় । তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেছেন, ব্যাংকের কঠিন শর্তের কারণে তারা সময়মতো ঋণ পাচ্ছেন না ।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিক্ষার জন্য দেয়া ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ছিলো ৪৭৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের একই প্রান্তিক শেষে এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪০ কোটি ৯৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে শিক্ষায় ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৬০ শতাংশ বা আড়াই গুণের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সাধারণত ব্যাংকগুলো ছাত্রদের জন্য দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন ঋণ দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্যও ঋণসুবিধা দিয়ে থাকে। কেউ আবার শিক্ষার্থীদের ঋণ দেয় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে। এটা এক ধরনের ভোক্তা ঋণ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষা বা শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া ব্যাংক ঋণের বড় অংশ নিয়ে থাকেন দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকের আয় ও লেনদেনের তথ্য যাচাই করে তবেই ব্যাংকগুলো এই ঋণ দেয়। বর্তমানে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ ধরনের ঋণের চাহিদা বাড়ছে।

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৫৩ হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর পছন্দের শীর্ষে ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। 

গত বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেছেন, চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা ব্যাংকের কঠিন শর্ত পূরণ করতে না পারায় শিক্ষা ঋণ নিতে পারছেন না। অনেক দেশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সুদমুক্ত শিক্ষাঋণ দেয় কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো শিক্ষাঋণএ ৯-১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়। উন্নত দেশগুলোতে, এই ধরনের ঋণ সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের যোগ্যতা এবং ভবিষ্যতের চাকরির সম্ভাবনার বিপরীতে দেয়া হয় কিন্তু বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভিন্ন।

বাংলাদেশে শিক্ষা ঋণের বেশির ভাগই পিতামাতার আয়ের ওপর নির্ভর করে। ছাত্রের যোগ্যতা এবং ভবিষ্যতের চাকরির সম্ভাবনার ওপর নয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে একটি গ্যারান্টি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি অনেক সময় সঠিক চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী খুঁজে পেতে বাধার সৃষ্টি করে। প্রায়শই, পিতামাতার আয় এ শর্ত পূরণ করতে পারে না। ফলে শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। শিক্ষাঋণের যোগ্য হওয়ার জন্য অভিভাবকদের সাধারণত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক উপার্জন দেখাতে হয়; তবে বেশির ভাগ দরিদ্র ছাত্রদের জন্য এটি সবসময় সম্ভব হয় না।
দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপকালে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শোভন বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে শিক্ষাঋণ নেয়া অনেক কঠিন ও শর্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ঋণ পিতামাতার আয়ের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়। যেহেতু তার বাবার আয় সেই শর্ত পূরণে ব্যর্থ তাই তিনি এই ঋণের জন্য আবেদনও করতে পারেননি। 

এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমার খুব ইচ্ছা ছিলো আমি উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাবো কিন্তু টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় সেই সাধ অধরা রয়ে গেলো। উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যদি ব্যাংকগুলো সহজ শর্তো ঋণ দিতো তাহলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে টাকা পরিশোধ করতে পারতেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষাঋণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিশ্চিত কারণ ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।

আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা। কারণ, প্রতি বছর হাজার হাজার নতুন স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করে এবং তাদের সবাই চাকরির সুযোগ পান না, যা ঋণ আদায়ের ঝুঁকি তৈরি করে। চাকরি নিশ্চিত করার পরেও অনেক দরিদ্র চাকরিজীবী যুবকরা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। এ কারণে ব্যাংকগুলো শিক্ষাঋণ দিতে অনীহা দেখায়।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048539638519287