সরকার ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এসব কমিশন পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের মালিকানায় বিশ্বাসী এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে এখানকার সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছে যা প্রশংসার দাবিদার। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন-এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য আপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংষ্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।
আমরা মনেপ্রাণে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি আমাদের একটি আশা ছিলো, প্রাথমিকভাবে বর্তমান সরকার শিক্ষা কমিশনও গঠন করবে। সেটি না দেখে আমরা কিছুটা হতাশ হয়েছি। আমরা তারপরেও বিশ্বাস করি, আমাদের জাতীর গর্ব এবং বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনুস নিশ্চয়ই শিক্ষার জন্য এমন কিছু করবেন, যা আমরা হয়তো চিন্তাও করিনি। শিক্ষা তার কাছে অগ্রাধিকার পাবে, এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারিত্বের রাজনীতি বন্ধ করার ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। অতীতে শুধু আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত পিএসসির সুপারিশকৃত অনেক প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত ছিলেন। গত ৮ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংষ্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকারের প্রথম মাসে দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরা পদত্যাগ করেছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। ক্রমাগতভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যেনো উজ্জ্বল হয় সেটি নিশ্চিত করতে শিক্ষাব্যবস্থার দিকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের পূর্ণ নজর রয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন।
আমরা আশা করছি, ‘শিক্ষা কমিশনের’ কথাও তিনি শিগগির ঘোষণা করা হবে। কারণ, শিক্ষার সংষ্কারের সঙ্গে দেশের প্রতিটি বিভাগের উন্নয়ন, সততা ও প্রকৃত পেশাদারিত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পূর্ববতী সরকারগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটাই ’লিপ সার্ভিস’ দিয়ে রাষ্ট্রের বাকি বিভাগগুলোতে অবৈধ সুযোগ-সুবিধার বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো। ফলে, জনগণের কোনো উপকার হয়নি। সরকারগুলো নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরিপুরি ধ্বংস করেছে আর শিক্ষাকে সব সময়ই অবজ্ঞা করেছে। কাজেই জনগণের পাহাড়সম আশা-বর্তমান সরকার শিক্ষাকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেটি হবে বিশ্বমানের। সেটি করার জন্য ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন একটি অপরিহার্য শর্ত।
লেখক : ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক