লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নতুন বছরের বই বিতরণে টাকা আদায়, বেপরোয়া দুর্নীতি-লুটপাট, বদলি বাণিজ্য, স্কুল থেকে বিভিন্ন ছুতোয় টাকা আদায়, সিএসএসআর প্রকল্পের টাকায় ক্রয় বাণিজ্য, জুন ক্লোজিংয়ের টাকা আত্মসাৎ, বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্ণামেন্টের টাকা নয়ছয়সহ কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণের নানান অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজিজের এসব অনিয়ম, বদলি বাণিজ্য, ঘুষ, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির প্রতিকারের দাবিতে উপজেলার ৩১ জন প্রধান ও সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন।
শিক্ষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা অফিসার (প্রকিউরমেন্ট) মো. শাহিন মিয়াকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্তের তারিখ ২৪ জুন শনিবার নির্ধারন করা হলেও আবেদনকারী ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের কোনো নোটিস করা হয়নি বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান। শিক্ষকরা তাদের আবেদনে উল্লেখ করেন, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান নতুন বছরের বই বিতরণে প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে পিয়নদের খাওয়ার নাম করে ১০০ টাকা করে আদায় করেন। এ টাকা কালেকশন করেন চর ডাক্তার সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক মোশারেফ হোসেন। আজিজুর রহমান সিএসএসআর প্রকল্পের পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্ত করার হারপিক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার, ভিক্সল, সাবানসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ে ৯৬টি স্কুলের মধ্যে ৬৫টি স্কুলের মালামাল নিজেই সরবরাহ করেন তাও আবার বাজারের সবচেয়ে নি¤œমানের নকল সামগ্রী। স্কুল প্রতি ১৮ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও মালামাল দেন ৫/৬ হাজার টাকার। স্কুলে এসব সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য তাকে ঠিকাদারি দিতে নিয়োগ করেন দালাল।
আলেকজান্ডার ইউনিয়নের দালাল চর ডাক্তার সপ্রাবি প্রধান শিক্ষক মোশারেফ হোসেন, চর আলগীর দায়িত্বে চর নেয়ামত সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক ফারুক আর পৌরসভার স্কুল সমুহের দায়িত্বে প. চর সেকান্দর সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান। শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান ২০২১-২২ অর্থবছরের জুন ক্লোজিংয়ে স্কুলের ক্ষুদ্র ও মাইনর মেরামত, এক্সেসসরিজ ও খেলনা ক্রয়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত স্কুলসমূহ থেকে দেড় পার্সেন্ট করে প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মেতে উঠেন বদলি বাণিজ্যে। তিনি ১ম ও ২য় ধাপের বদলিকৃত শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০/৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। সংযুক্ত বদলি বাবদ শিক্ষক প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা আদায় করেন।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলায় ইউনিয়নভিত্তিক বাজেট নিয়ে লুকোচুরি করে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন। স্কুল ভিজিটে আজিজ ২ হাজার টাকা করে আদায় করেন। এ ছাড়া তিনি পরিদর্শনকালে নানা অনিয়ম দেখিয়ে শিক্ষকদের হয়রানি করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষকদের টিএ বিল থেকে প্র.শি আবুল কালাম, প্র.শি রেজাউল হকসহ ৬ জন শিক্ষকের নামে বিল করে তিনি আত্মসাৎ করেন। অটিষ্টিক শিশুদের জন্য বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। গোডাউন থেকে পুরনো বই বিক্রি করে পুরো টাকা সে একাই আত্মসাৎ করেন। ২০২২ সালের এনএসএ শিক্ষার্থী মূল্যায়নের খরচের টাকা কোনো বিদ্যালয়ে না দিয়ে সে আত্মসাৎ করেন। আরো উল্লেখ করেন, আজিজ সুবর্ণচর উপজেলায় সহকারী শিক্ষা অফিসার থাকাকালে সে বহু অনিয়ম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে, তিনি ব্যস্ত আছেন বলে এড়িয়ে যান।
তদন্ত কর্মকর্তা শিক্ষা অফিসার (প্রকিউরমেন্ট) মো. শাহিন মিয়া জানান, নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত হবে। যদি কাউকে নোটিস করে না থাকে তাহলে বিষয়টি আমি দেখছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ জানান, আজিজুর রহমান একজন স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের লোক। তার নানা অনিয়ম দুর্নীতির খবর শুনেছি। সে বক্তব্যে কখনোই জাতির পিতার নাম এবং জাতীয় স্লোগান জয় বাংলা উচ্চারণ করেন না।