পাবনার আটঘরিয়ায় নামমাত্র মূল্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ভবন বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা মোন্তাকিমুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিককে কাজে বাধা দেন অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা।
জানা গেছে, চাঁদভা ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি মাত্র এক বছর আগে জাতীয় পতাকার আদলে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে রং করা হয়। ঠিক এক বছর পর চলতি বছরে ভবনটি পরিত্যক্ত দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার ৩২৫ টাকায়। শুধু সড়াবাড়িয়া নয় আটঘরিয়ার উপজেলার এমন ৮টি পাকা ও সেমিপাকা স্কুল পরস্পর যোগসাজশ করে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮টি ভবন দুটি প্যাকেজ গ্রুপে ভাগ করে উন্মুক্ত নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপজেলা শিক্ষা অফিস। নিলামে প্রথম প্যাকেজ গ্রুপে ৪টি ভবনের ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ৬৮ হাজার ৬৮২ টাকা এবং দ্বিতীয় প্যাকেজ গ্রুপে বাকি ৪টি ভবনের ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ৪৯ হাজার ৩৮২ টাকা। উন্মুক্ত নিলাম হলেও দুইটি গ্রুপের বিপরীতে মাত্র ৩ জন অংশগ্রহণ করেন। নিলাম ডাকে প্রথম প্যাকেজ গ্রুপের ৪টি ভবন মাত্র ৬১৮ টাকা বেশি দিয়ে ৬৮ হাজার ৬৮২ টাকায় কিনে নেন মো. মহিদুল ইসলাম। আর দ্বিতীয় প্যাকেজ গ্রুপের ৪টি ভবন মাত্র ৮১৮ টাকা বেশি দিয়ে ৫০ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নেন মো. লিটন হোসেন।
বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, এক একটি ভবনে কয়েক টন করে লোহা রয়েছে। যার বাজার মূল্য ১-২ লাখ টাকা। যে পরিমাণে ইট আছে এর বাজার মূল্য কয়েক লাখ টাকা। এতো মূল্যের ভবন কীভাবে ১২ হাজার টাকা, ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিলাম ক্রেতা মো. মহিদুল ইসলাম ও মো. লিটন হোসেন উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর হােসেনের ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন মহলের যোগসাজশে নিলামের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা মূল্যের ভবনগুলো তারা নামমাত্র মূল্যে কিনে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেছেন। পরবর্তী ক্রেতা সাব-ঠিকাদার সুকচাঁদ হোসেন দাবি করেন নিলামের পর ভবনগুলো ৮ লাখ টাকা দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে কিনেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কোনো ওয়ার্ক অর্ডার দেখাতে পারেননি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোন্তাকিমুর রহমানের অফিসে একাধিকবার গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি সাংবাদিকদের আসার কথা শুনে অফিস থেকে বের হয়ে যান। পরে সাংবাদিকরা তার অবস্থান জানতে পেরে বক্তব্য নিতে দূরবর্তী একটি স্কুলে উপস্থিত হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাকসুদা আক্তার মাসু বলেন, যে ভবনগুলো বিক্রি করা হয়েছে সেগুলো জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। আর সমস্ত নিয়ম অনুযায়ী বিক্রি হয়েছে। এখন বাইরে যোগসাজশ বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে আমার জানা নেই। এরপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এবিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তানভীর ইসলাম বলেন, সকল বিধি অনুসারে বিক্রি হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। আর যেসব ঠিকাদার ভবনগুলো পেয়েছেন শুধু তারা একা নয় আটঘরিয়া সব মানুষই আমার ঘনিষ্ঠ। তারা নিলামের মাধ্যমে ভবনগুলো পেয়েছেন। এখানে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা কিছু দেখি না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র হালদারও বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যদি এটি একা বিক্রি করে থাকেন তাহলে অন্যায় করেছেন কিন্তু তদন্ত ছাড়া বলা মুশকিল। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছে সেহেতু তদন্ত করে দেখা যেতে পারে।