পদোন্নতির জন্য উপযুক্ত সব কর্মকর্তাকে পদোন্নতির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। রোববার (৩০ মে) এ আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কাজী জাকির হোসেন।
সমিতি না থাকায় পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানা যায়। সারাদেশের সরকারি কলেজ ও মাদরাসায় এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে কর্মরত এ ক্যাডারের সদস্যরা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডার দুটো প্রশাসন ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কাজী জাকির হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তিন বছর ধরে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি হচ্ছে না। পদোন্নতিযোগ্য সব কর্মকর্তার পদোন্নতির দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারের নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া আবেদনে।
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা মারাত্মকভাবে বৈষম্যের শিকার বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনের সারমর্ম উল্লেখ করে দৈনিক শিক্ষায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩ বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকা, একটি পদোন্নতি শুরু হয়ে একটি ধাপে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে পদোন্নতিকে অসম্পূর্ণ রেখে ৯ মাস পরে গত ৯ মে বাকি একটি ধাপের জন্য পদোন্নতির সভা ডেকে দফায় দফায় সভা করেও সিদ্ধান্ত নিতে না পারা নজিরবিহীন । আবেদনে অন্যান্য ক্যাডারে যেভাবে শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে সেভাবে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দিয়ে জট দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য ৩ হাজার ৩০৮ জন এবং সহকারী অধ্যাপক পদে ২ হাজার ৪৭৬ জনের সবাইকে যেন পদোন্নতি দেওয়া হয়। যেহেতু এ পদোন্নতিটির অংশ বিশেষ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুলাই।
আবেদনে বিভিন্ন ব্যাচের পদোন্নতিবঞ্চনার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এত বলা হয়, চলমান পদোন্নতির অংশবিশেষ হিসেবে গত বছর যে পদোন্নতি দেওয়া সেখানে ১৬ ব্যাচের যারা পদোন্নতি পাননি তারা ১২ বছর ধরে এখনো পঞ্চম গ্রেডে সহযোগী অধ্যাপক হয়ে আছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই সহযোগী অধ্যাপক অর্থাৎ পঞ্চম গ্রেড থেকে অবসরে চলে যাবেন। এছাড়া ১৭ ব্যাচ থেকে পদোন্নতি বঞ্চিতরা ৭ বছরের বেশি সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৮, ২০ ও ২১ ব্যাচের অনেকেই ৪ থেকে ৫ ধরে বছর পঞ্চম গ্রেডে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো আবেদনে আরো বলা হয়, চলমান পদোন্নতির জন্য যারা অপেক্ষা করছেন তাদের মধ্যে ২২ ব্যাচের ১২ বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক, ২৩ ব্যাচ (বিশেষ বিসিএস মুক্তিযোদ্ধার সন্তান) ৮ বছর সহকারী অধ্যাপক, ২৪ ব্যাচের যারা পদোন্নতি পাননি তারাসহ প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর সহকারী অধ্যাপক আছেন। সিলেকশন গ্রেড বঞ্চিত ২৫ ও ২৬ ব্যাচ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক, ২৭ ব্যাচ ৪ থেকে ৭ বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক, যারা বর্তমান পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তই হয়নি। ২৮ ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা ১০ বছর ৫ মাস ধরে প্রভাষক, ২৯ ব্যাচের অনেকে ১০ বছর ধরে প্রভাষক, ৩০ ব্যাচের অধিকাংশ ৯ বছর প্রভাষক, ৩১ ব্যাচ ৯ বছর প্রভাষক, ৩২ ব্যাচ ৮ বছর প্রভাষক, ৩৩ ব্যাচ ৭ বছর ধরে প্রভাষক।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১০-১২ বছরেও প্রথম পদোন্নতি বা পদোন্নতি না পাওয়া শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মধ্যে শিক্ষা ও শিক্ষা ক্যাডার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে এবং তারা আশাহত হয়ে পড়ছেন।
কাজী জাকির হোসেন ছাড়াও আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন রবিউর সাদিক নীরব, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান, মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ইয়ামিন আলী, চঞ্চল কুমার বাছার, পঙ্কজ শিকদার, রাজু আহমেদ, রবিউল ইসলাম, টিপু সুলতান, নাহিদুল ইসলাম, বাসুদেব বিশ্বাস, হাবিবুর রহমান, শাকের আহমদ চৌধুরী ও আমজাদ হোসেন।
এর আগে গত ৬ মে তারা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছেও একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন।