শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন ১৬০ উপজেলায় আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রকল্পে কাজ না করে ২০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাপ্ত হয়ে তা তদন্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঠায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু বকর সিদ্দীক অভিযোগ তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তরের নেতৃত্বে দুই সদস্যের কমিটি করে দেন। ইতিমধ্যে ঐ সচিবকে কম গুরুতবপূর্ণ পদে বদলি করা হয়েছে। এখন তদন্ত বন্ধ বলে জানা গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, এই প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে একটি প্রভাবশালী মহল শুরু থেকে চাতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটিয়ে অন্তত তিন জন কর্মকর্তাকে ব্যানবেইসে বদলি করে নেন। এবং এই কর্মকর্তাদের দ্বারা বেআইনিভাবে পুরো কাজ সারতে আগের তারিখের কাগজপত্র বানিয়ে টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করে এবং তারা সেই কাজ পায়। এক্ষেত্রে ২৪ জন উপঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা যাবে মর্মেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এসব সাব-কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কাজ না করেই অগ্রিমবাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে এই শক্তিশালী চক্র। এরসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ও মন্ত্রণালয়ের বাইরে একটি চক্র সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এছাড়া চক্রের সঙ্গে কিছু বিদেশি নাগরিকও জড়িত যাদের মাধ্যমে তুলে নেওয়া টাকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এবং লো ল্যান্ড না হওয়া সত্ত্বেও লো ল্যান্ড দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা পাশ করানোসহ নানান রকম দুর্নীতির এক মহাকর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এদিকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা কথা বলতে রাজি হননি। কোরিয়ান ঋণ ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে যৌথভাবে এই কাজটি করার কথা। থাইহান কনসোর্টিয়াম (তাইহান ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড, আই এল জে আই এন-ই এনসি কোম্পানি লিমিটেড এবং ইউবিঅন কোম্পানি লিমিটেড) এ কাজের প্রধান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল। পরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ২৪ জন সাব ঠিকাদার নিয়োগ করে ঐ টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দুর্নীতির চক্রে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জড়িত। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ নম্বর ২৩। দীর্ঘদিনেও অভিযোগের তদন্ত না হওয়ায় দুদকের একটি মহল হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, প্রয়োজনে তারা নিজেরাই তদন্তকাজ শুরু করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে প্রদশর্ক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েও পরে তা স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারও আগে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন শিক্ষাসচিব থাকাকালে মাউশি অধিদপ্তর ও একটি প্রকল্পের একজন নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকে পাঠান। সেই তদন্তও স্থগিত রেখেছে দুদক। অভিযুক্ত সাবেক মহাপরিচালক গতকাল একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে বড় পদে নিয়োগ পেয়েছেন।