শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলুক জ্বলে উঠুক বাতিঘর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

স্কুল কলেজ খুলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এবং শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো স্বাধীনতার এই মাসেই খুলতে যাচ্ছে সব। বলে রাখি যে দেশে আছি সিডনি শহরে ঘোর করোনা কালের কিছুদিন বাদে সবকিছু খোলা রেখেছিল সরকার। বাস্তবতা ভিন্ন দু’দেশের। মূলত জনসংখ্যার পার্থক্য আর সমাজ নিয়ন্ত্রণ এখানে বড় বিষয়। উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা অনুচিত। এখানে স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার বিপদ ভিন্ন ধরনের। জব মার্কেট কথাটা আমরা শুনি বা জানি। কিন্তু এটাই যে সব তা বুঝতে হলে উন্নত দেশ নামে পরিচিত দেশগুলোতে আসতে হবে। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ)  জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, অর্থ টাকা পয়সার যোগান এসব দেশের মূল বিষয়। এখানে যৌথ পরিবার বা প্রতিবেশী ধারণাটা একেবারে আলাদা। যৌথ পরিবার বলতে কিছু নেই। আর প্রতিবেশী আছে বটে, তার কোন হদিস জানা যায় না। এমন প্রতিবেশীর সঙ্গেও ছিলাম বা আছি কোনদিন তাদের নামও জানা হয়নি। দেখা হলে হাসি বিনিময় ছাড়া আর কোন কথাও হয় না। এসব সমাজে মা-বাবা দুজন কাজ না করলে সচ্ছলভাবে চলা অসম্ভব। সমস্যা ছিল দু’জন কাজে গেলে বাচ্চাদের দেখভাল করবে কে? চাইল্ড কেয়ার বা শিশু যত্ন নেয়ার প্রতিষ্ঠান বা স্কুলগুলো সম্ভবত অল্প ক’দিন বন্ধ ছিল। বাকিগুলো খোলা। এখন কয়েক মাস ধরে নিয়মিত চলছে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা ছিল অসম্ভব। আমাদের ঘনবসতির দেশে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং মানা কঠিন। বাচ্চাদের বেলায় এটা কে আসলে চোখে চোখে রাখত বা রাখবে? এই সঙ্গে অভিভাবকদের মানসিক ভীতিও কাজ করেছে। কে পাঠাবে তার সন্তানকে? কে নেবে ঝুঁকি? সব মিলিয়ে এটা বলতেই হবে সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক। তবে এই লম্বা দীর্ঘ বন্ধও সুখকর না। এমনিতে আমাদের দেশের লেখাপড়ার মান রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। সাম্প্রতিক বিশ্বের যতগুলো জরিপ দেখেছি কোথাও আমাদের অবস্থান সুখকর কিছু না। ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি আমরা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর আগের জায়গায় নেই। সেখানে যতটা পড়াশোনা তার চেয়ে বেশি পলিটিক্স। অপরাজনীতি ভর করে আছে ছাত্রছাত্রীদের ওপর।

এ কথাও বলা উচিত দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রায় সবটাই আছে তোপের মুখে। আজকাল ডিজিটাল যুগে চাইলেই অনেক কিছু আড়াল করা যায় না। বিশেষত বিশ্বায়নের ফলে সবকিছু সুলভ। আপনি ইউটিউব বা অনলাইনে গেলেই দেখবেন রগরগে দগদগে সত্য মিথ্যায় ভরা প্রচার প্রচারণা। বলাবাহুল্য, আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে সবসময় পিছিয়ে। তারা বঙ্গবন্ধুর আমলেও জবাব দিতে সময় পায়নি। এখনও সে গড়িমসি চলছে। ফলে আজকের প্রজন্ম বা আমরাও অনেক বিষয়ে ভীষণ দ্বন্দ্বে ভুগি। কোনটা সত্য বা কোনটা মিথ্যা বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এই যে লেখাপড়ার জগতটা খোলার ব্যাপার সেটাও এখন তর্কের। একদল বলছিল সরকার নাকি আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে খুলতে দিচ্ছে না। এখন তারাই আবার মোড় ঘুরিয়ে বলছে, এটা কি ঠিক হচ্ছে? ঝুঁকি নিচ্ছে না তো জাতি? ঝুঁকি যে কিছুটা থাকবে সেটা নিশ্চিত। কিন্তু মহামারী কোভিডের টিকা এসে গেছে। টিকা দেয়াও শুরু হয়েছে। এখন তো ধীরে ধীরে বাচ্চাদের স্কুলে, কলেজে যেতেই হবে। এটা জানি দীর্ঘ সময়ের অভ্যাস আর রুটিনে গোড়ার দিকে সমস্যা হবে। ছেলেমেয়েরা অনলাইনের পর এখানে এসে নিজেদের মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। একইভাবে টিচারদের বেলায়ও আমরা এসব কারণ কাজ করতে দেখব। কিন্তু বসে বসে আর কতদিন?

কর্মপ্রবাহের নিয়মই হচ্ছে যখন তা শুরু হয়ে যায় সে নিজেই ভাসিয়ে নেয়। দেশের মানুষকে এটাও জানা উচিত করোনা চলে যেতে আসেনি। এটা জানার পর দুনিয়ার সবদেশ তাদের সাধ্য মতো ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা নেয়নি তাদের সামনে এখন অনেক উদাহরণ। তারা চাইলেই নানা দেশ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতি বহু দেশের বিশেষত ধনী দেশের চাইতে ভাল। ভালভাবে তা দমিয়ে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। কারণ এটা আমরা সবাই জানি জনবহুল ঘনবসতির সমাজ, তার ওপর লেখাপড়া না জানা মানুষ। ছিল অপপ্রচার। এসব বাধা পেরিয়ে দেশ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করেছে করোনা। তাই স্কুল-কলেজ খোলা যেমন একদিকে ঝুঁকির আরেকদিকে তার বিকল্প নেই। বাংলাদেশের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রমাণ করবে আমরা কতটা সাবধানী হয়ে উঠেছি।

শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের মনোজগতেও এসেছে পরিবর্তন। বড়দের মতো তারাও ভয় পেয়েছে। তারাও জানে এই মহামারী কতটা সাংঘাতিক। তাদের ভেতর সাবধানতার এই বীজ যেন বড় হয়ে ওঠে। যারা তাদের অভিভাবক বা টিচার বা কর্তা সবার উচিত এই বিষয়ে খোলামেলা কথা বলা। সবসময় তাদের মনোভাবের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। করোনাকালে বাড়ি ঘরে থাকা কোমলমতি শিশুরা বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছে মোবাইল, কম্পিউটার বা ডিজিটাল মিডিয়ায়। এদের বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সহজ হবে না। এসব যন্ত্রনির্ভরতা কাটিয়ে তাদের বিদ্যালয়মুখী করাটা চ্যালেঞ্জ।

একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত, যাতে বড় কোন মাসুল দিতে না হয়। আমাদের হুজুগে সমাজ তাহলে এর সুযোগে সরকার ও সমাজের বারোটা বাজাতে ছাড়বে না। বাচ্চাদের নিরাপত্তা মা-বাবার কাছে যেমন তেমনি দেশ জাতির কাছেও বড় বিষয়। সেটা যেন তোপের মুখে না পড়ে। দুঃখ এই সদিচ্ছা থাকলেও পরিকল্পনা থাকে না। আর পরিকল্পনা থাকলেও তার কোন বাস্তবায়ন হয় না। এতদিন পর, মাসের পর মাস বন্ধের পর স্কুল-কলেজ খুলবে, কোথায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে। তা না হয়ে এখন প্রশ্ন পাহাড়ের মতো মাথা তুলছে। আশা করি আবার কলকাকলি মুখর হয়ে উঠবে সবকিছু।

লেখক: অজয় দাশগুপ্ত, সিডনি থেকে


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056941509246826