করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ রোববার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
শনিবার রাজধানীর ইমপেরিয়াল কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কথা জানিয়েছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শনিবার আমাদের মন্ত্রণালয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আছে। রোববার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সঙ্গে বৈঠক আছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।
নতুন করে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের ধারণা ছিলো মার্চ এপ্রিলে বাড়বে। কিন্তু জানয়ারির গোড়ার দিকেই বাড়ছে, কাজেই আমাদের যে পরিকল্পনা তাতে অ্যাডজাস্টমেন্ট কিছুটা দরকার হবে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। টিকা নিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসে। সেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। টিকা নিয়ে যেনও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসে। সেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়ত একটু অসুবিধা হতে পারে যারা ১২ বছরের কম বয়সী তাদের জন্য। সে বিষয়গুলো নিয়েও আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
শিখন ঘাটতি পূরণে নিরাময়মূলক ক্লাস নেওয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেড় বছরে লেখাপড়ায় যে ঘাটতি হয়েছে, সেটি পূরণের জন্য রেমিডিয়াল ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু আমাদের অনেক সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। কারণ আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গত দেড় বছর শিক্ষার্থীরা মুখোমুখী ক্লাস করতে পারেনি। শ্রেণিকক্ষে তাদের পাঠদান করানো যায়নি। অনলাইনে বা টেলিভিশনে করেছে, এতে যে ঘাটতি হয়েছে তাতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে ঘাটতি পুরণ করতে হবে। কিন্তু যেভাবে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই চলছেন অনেকে, তাতে করোনা সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষার ক্ষতিটাই বেশি হবে, সেটাকে মাথায় রেখে, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, আমরা প্রত্যেকে যেনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। এটি সবাইকে মানতে হবে। আমি সবার কাছে আবেদন জানাবো সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বা অন্য যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান হোক আমরা সবাই যেনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।
রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, চতৃর্থ শিল্প বিপ্লব মোবিলায় প্রযুক্তি জ্ঞানের সঙ্গে সঠিক দক্ষতা থাকতে হবে, সেইসাথে মানসিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি হতে হবে খুব ছোটবেলা থেকে, পরিবারে মাধ্যমে। পরিবার যেমন শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলে তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার অনেক দায়িত্ব আছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি মানসিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ না থাকে তাহলে শিক্ষার্থীকে সেভাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর সে জন্যই আমরা নতুন কারিকুলাম করছি। সেই কারিকুলাম শুধু পরীক্ষা নির্ভর ও সনদ সর্বস্ব নয়, হতে হবে আনন্দময়, দক্ষতা নির্ভর, প্রয়োগ যাতে করতে পারে। শিখলাম পরীক্ষা দিলাম, ভুলে গেলাম কোনও লাভ নেই, যা শিখছি তা যেনও প্রয়োগ করতে পারি বাস্তব জীবনে। সেভাবেই শিখতে হবে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে সুনাগরিক হিসেবে ও বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবো।
শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের চতুর্থ শিল্প বিব্লবের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এখন দুনিয়া জুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের সঙ্গে আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে। এই প্রুযক্তির জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে। এই শিল্প বিপ্লবের সফল অংশিদার আমরা হবো, এই প্রত্যয় থাকতে হবে। কারণ আমারা আগের শিল্প বিল্পব ধরতে পারিনি। এবার ধরতেই হবে। আমাদের প্রযুক্তিবান্ধব ও বিজ্ঞান মনস্ক হতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ছাড়া জাতি উন্নত হয় না। তাহলে সেই শিক্ষা কেমন হবে? সেটা ভাবা খুব দরকার, আমরা ভাবছি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতে। সেটা মোটামমোটি এসে গেছে। এখন আমাদের নজর শিক্ষার মানের দিকে। টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যে মধ্যে শিক্ষা চার নম্বর। শিক্ষার মধ্যে কতগুলো লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। একটি হচ্ছে সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা। সেই শিক্ষা থেকে কেউ যেন বাদ না পড়ে। আরেকটি হচ্ছে সমতা বা সাম্যের জায়গা তৈরি করা। এর সঙ্গে মানসম্মত শিক্ষা, আরেকটি হচ্ছে জীবনব্যাপী শিক্ষা। এই আন্তর্জাতিক অঙ্গিকারগুলো আমাদের পুরণ করতে হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রূপকল্প দিয়েছেন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবো। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। খুব শিগগিরিই মধ্যম আয়ের দেশ হবো। প্রধানমন্ত্রী আরও আরেকটি স্বপ্ন দেখিয়েছেন ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ ও শান্তিময় দেশ হবে।