দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের নারী, আদিবাসী সম্প্রদায় এবং প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীর জন্য সমপর্যায়ের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সমতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্রুতি ও সাফল্য তুলে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
গতকাল বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলও সদর দপ্তরে দুইদিনব্যাপী গ্লোবাল স্কিলস ফোরামের আয়োজনে ‘দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলায় বাংলাদেশের সাফল্য এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেশনে এ মন্ত্রী এসব তথ্য তুলে ধরেন।
এই সেশনে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় প্যানেলে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনের সিনিয়র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন প্রধান উন্নয়ন অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা সরকারের প্রতিনিধিরা।
এই অনুষ্ঠানে পরিবর্তনশীল বিশ্বে দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ এবং অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করার জন্য সরকার, চাকরিদাতা, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো।
এদিকে এই সরকারের বর্ণিত রাজনৈতিক উদ্দেশ এবং উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তা সত্ত্বেও, মন্ত্রী শিল্পকারখানার উচ্চ-দক্ষ চাহিদা এবং সাধারণভাবে স্বল্প-দক্ষ শ্রমশক্তির মধ্যে দক্ষতার অমিল দূর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যা জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক শ্রমবাজারে অবদান রাখবে।
মন্ত্রী শিল্পখাত এবং উন্নয়ন অংশীদারদের জীবনব্যাপী শিক্ষা বা লাইফলং লার্নিকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি এবং কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো উদীয়মান শিল্পখাতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহমেদ দক্ষতা উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অপরিহার্য ভূমিকা তুলে ধরেন। দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরো শিক্ষানবিশের প্রয়োজন, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কর্মসংস্থানে একটি নিরবচ্ছিন্ন রূপান্তরকে সহজতর করে। তিনি প্রয়োগকৃত শিক্ষানবিশ মডেলগুলোকে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন এবং সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনার পক্ষে পরামর্শ দেন এবং শিল্প-সংশ্লিষ্ট কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সেশনে বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সেক্রেটারি রেজওয়ানা সাকি শ্রমবাজারের উপযোগী উন্নত দক্ষতা অর্জনের জন্য কর্মরত শ্রমিকরা যে বাধার সম্মুখীন হয় তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি শ্রমিক সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সামাজিক সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেন। অতিসত্তর বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন। তিনি মনে করেন শ্রমিকদের দক্ষতার উন্নয়ন, আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুবিধার্থে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি শুধু দেশীয় কর্মসংস্থানের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্যও বাংলাদেশি কর্মশক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইইউ-এর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল প্রতিনিধিরা ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তাদের দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার, আইএলও এবং উন্নয়ন অংশীদারদের প্রশংসা করেন, যা জাতীয় দক্ষতা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। সরকারের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী করার জন্য কার্যকর অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।