শিক্ষা বোর্ডের দুই কোটি টাকা বাটোয়ারা, ভাগের মা গঙ্গা না পাওয়ায় অসন্তোষ

আমাদের বার্তা, যশোর |

আমাদের বার্তা, যশোর : ভাগের মা গঙ্গা পায়নি যশোর শিক্ষা বোর্ডে। প্রায় দুই কোটি টাকা বাটোয়ারায় যার যার অংশ বুঝে পেয়েছেন চেয়ারম্যান থেকে সুইপার পর্যন্ত সব স্তরের কর্মচারী। কিন্তু বঞ্চিত হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ও বদলিকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, ৭ বছরের পুরনো টাকা ভাগাভাগিকালে সে সময়ে সংশ্লিষ্টদের ‘ন্যায্য অধিকার’ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই বেজায় গোস্বা হয়েছে তাদের। কিন্তু, ভাগ পাওয়ারা কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। অতিরিক্ত টাকা পেয়ে আনন্দে পোয়াবারো তাদের। বসে আছেন মুখে কুলুপ এঁটে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্ব্ নেয়া বর্তমান চেয়ারম্যানও আগের কয়েক বছরের টাকা পকেটে পুরে পুরোপুরি চুপ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রশ্নফাঁস রোধ ও প্রশ্নের গুণগত মান সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রশ্ন ব্যাংক চালু করে যশোর বোর্ড। এ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক, অর্ধবার্ষিক বা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী ও প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই প্রশ্নব্যাংক তৈরিকালে সিদ্ধান্ত ছিলো, প্রতি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী প্রতি এক সেট প্রশ্নের জন্য ১০ টাকা হারে ফি বোর্ডকে দেবে প্রতিষ্ঠান। জমাকৃত টাকার ২০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট সবাই ভাগ করে নেবে। বাকী ৮০ শতাংশ বোর্ড ফান্ডে জমা হবে। শুরু থেকে এ হিসেবে টাকা উত্তোলিত হলেও চলতি বছর ২০ শতাংশের উত্তোলনের নীতিমালা বদলে করা হয় ৬০ শতাংশ। অতীতে উত্তোলিত ২০ শতাংশের ক্ষেত্রেও ৬০ শতাংশ বলবৎ রাখা হয়। ফলে পূর্বের হিসাবে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ এবং বর্তমান হিসাবে ৬০ শতাংশ উত্তোলনের পর টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি। এই টাকা ভাগাভাগি নিয়েই গন্ডগোল। পদমর্যাদা অনুযায়ী বোর্ডের সবাই এ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিলেও আগের ৪০ শতাংশ টাকার ভাগ থেকে সে সময়ে কর্মরতদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ২০ শতাংশের পরিবর্তে ৬০ শতাংশ টাকা বাটোয়ারা করে প্রতিষ্ঠানের লাভের চেয়ে ব্যক্তির পাওয়াকে বড় করে দেখা হয়েছে বলেও জোর অভিযোগ উঠেছে। 

বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রশ্ন বিক্রির আয় অনেক বেড়েছে। এমতাবস্থায় পূর্ব নির্ধারিত ২০ শতাংশ গ্রহণ ও ভাগাভাগির স্থলে আরো বেশি নেয়ার আকাঙ্খা জাগে কয়েকজনের। তারা বোর্ড চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দিয়ে ২০ শতাংশের পরিবর্তে ৬০ শতাংশ গ্রহণের জন্যে অনুরোধ জানান। নিজের স্বাস্থ্য দেখে চেয়ারম্যানও রাজি হয়ে যান। বোর্ড কমিটি ও বোর্ডের অর্থ কমিটির কাছে এ প্রস্তাব তোলা হয় চলতি বছর, তা পাসও হয়। এর প্রেক্ষিতে নভেম্বর মাসে বকেয়া হিসেবে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রশ্নব্যাংকের আয়ের বর্ধিত ৪০ শতাংশ (নিয়মিত ২০ শতাংশ ছাড়া) উত্তোলন করা হয়। এই টাকা থেকে প্রতিজন ঝাড়ুদার লক্ষাধিক টাকা পেয়েছেন, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা পেয়েছেন দেড় লাখের বেশি করে। চেয়ারম্যানের টাকা আরো বেশী।  

তবে এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বদলি হওয়া বা পিআরএল অথবা অবসরে যাওয়ারা। তাদের দাবি, ওই সময়ের টাকায় তারাও হকদার। তাদের অভিযোগ, মাত্র কয়েকমাস আগে এসে অনেকেই সাত বছরের সুবিধা ভোগ করেছেন। আবার আগে যারা ছিলেন তারা বঞ্চিত হয়েছেন। 

সাবেক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম ও শরীফ আব্দুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, ৩৭ জনকে এই টাকার অংশ থেকে বাদ রাখা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে কথা বলতে গেলেও তিনি জানিয়েছেন, অতীতেও এ জাতীয় টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে বোর্ডে কর্মরতরাই সুবিধা নিয়েছেন, চলে যাওয়ারা পাননি, এখনো তা অব্যাহত আছে। 

বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব ২০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে নিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা বন্টনের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, টাকা বৃদ্ধির বিষয়টি বোর্ডের অর্থ কমিটি ও বোর্ড কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। তারপর তা পাস হয় ও গ্রহণ করা হয়। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028197765350342