শিক্ষা সাংবাদিকদের তদবির না শুনলে রিপোর্ট হয়ে যায় : শিক্ষামন্ত্রী

এনামুলক হক প্রিন্স |

সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠভাবে খবর পরিবেশনের আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন,  আমাদের মধ্যে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কোনো সন্দেহ নেই। আমি যদি খারাপ হই। বস্তুনিষ্ঠভাবে সেটি তুলে ধরেন। কিন্তু না হলে আমার সম্মান মর্যাদা নষ্ট করার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি। 

গত সোমবার (৫ জুন) রাজধানীতে শিক্ষা সাংবাদিকদের একাংশের সংগঠন ইরাব আয়োজিত এডুকেশন এক্সপোতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠতার পরিবর্তে সেনসেশনালিজমের পেছনে দৌড়ানোর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য উপাচার্য পাওয়া সম্ভব হয় না বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। কোনো সাংবাদিকের কোনো আত্মীয়কে চাকরি না দিলেই সেই সাংবাদিক রিপোর্ট করে দেন বলেও পূর্ববর্তী বক্তার বক্তব্যে একমত পোষণ করেন শিক্ষামন্ত্রী। কোনো সাংবাদিকের অনৈতিক অনুরোধ না রাখলে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আয়োজক সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আরো প্রশ্ন তোলেন, মেধা, যোগ্যতা, শ্রম দিয়ে তিনি সারাজীবনে শিক্ষক যে সম্মান অর্জন করেন তা একটা রিপোর্ট করে ধুলোয় মিলিয়ে দেয়ার অধিকার সাংবাদিকের আছে কি-না?

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এক্সপোতে দীপু মনি বলেন, আমাদের যে সম্মানিত যোগ্য শিক্ষকরা, যারা উপাচার্য হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সত্যি সত্যি এক একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স হতে পারে, সেই মানুষগুলোকে আমরা সেই জায়গায় পাই না কেনো চাওয়ার পরেও। কেনো তারা বলেন যে, আমি হবো না। যেখানে লোকে পদের পেছনে ছোটে, সেখানে এই মানুষগুলো কেনো বলেন, আমি হবো না। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও এর মূল কারণ আপনারা, সাংবাদিকরা, বাংলাদেশের গণমাধ্যম। কারণ, আপনারা বস্তুনিষ্ঠতার পরিবর্তে সেনসেশনালিজমের পেছনে দৌড়ান। এই যে সেনসেশনালিজম খোঁজেন বস্তুনিষ্ঠতার বদলে, তার সরাসরি কুফল, আমরা উপাচার্য পাই না। 

মন্ত্রী বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের মূল সম্পদ তার মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা। আর এ সমাজে এই সবকিছু দিয়ে তিনি যে সম্মান টুকু অর্জন করেছেন, এটি তার সম্পদ। অধিকাংশ শিক্ষক পারিবারিকভাবে বিত্তশালী না হলে নিজের আর্থিক উপার্জন দিয়ে বিত্তশালী হতে পারেন না। এ সমাজে আমরা শিক্ষকদের সেরকম বেতন দেই না। আর তার সে অর্থ উপার্জনের সুযোগও নেই। মেধা, যোগ্যতা, শ্রম দিয়ে তিনি সারাজীবনে যে সম্মান অর্জন করেছেন, আপনার একটা রিপোর্ট তার সেই সারাজীবনের সম্মানকে ধুলোয় মিলিয়ে দেয়। এটি করবার অধিকার আপনার (সাংবাদিকের) আছে কি-না? 

তিনি বলেন, আমি কাজ করবো, জান দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবো। আর আপনি আমাকে যেকোনো সময় চোর-ডাকাত বলবেন? আমি একজন মানুষ, আমার পরিবার আছে। আমার এক্সটেন্ডেড পরিবার আছে। যে বয়সে একজন মানুষ উপাচার্য হন ততোদিনে শুধু তার ছেলেমেয়ে নয়, ওই ছেলেমেয়েরও এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি থাকে। কারো কাছে আর মান ইজ্জত থাকে না। কেনো? কারো একজনের মনে হলো একটা রিপোর্ট করে দেই। তার পেছনেও অনেক প্রভাব থাকে, সেটাও জানি। সেই অন্যায় প্রভাবে অনেক সময় প্রভাবিত হয়ে আপনারা এ রিপোর্টগুলো করেন। আপনাদের (সাংবাদিকদের) ভয়ে কেউ দায়িত্ব নিতে চান না। পাশে আনোয়ার ভাই (পূর্ববর্তী বক্তা) বলেছেন, চাকরি না দিলেই (সাংবাদিকের কোনো আত্মীয়কে) রিপোর্ট হয়ে যায়। হয় তো, একদম সত্য কথা। 

মন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছেও আইন ভাঙার প্রস্তাব আসে। আইন ভাঙার প্রস্তাব খুব বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিলে পরের দিন বিশাল বড় জিনিস আসে পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে। এটা কি ঘৃণ্য একটা কাজ নয়? আপনি একটা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেবেন, এটার অধিকারতো আপনাকে কেউ দেয়নি।
 
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, গণমাধ্যমকে বুঝতে হবে তার কাজের উদ্দেশ কি। যারা শিক্ষা নিয়ে রিপোর্ট করেন, শিক্ষাকে এগিয়ে দেয়া, তার মাধ্যমে পুরো দেশটাকে এগিয়ে দেয়া, শিক্ষাকে সহায়তা করা। নিশ্চয়ই যেখানে অস্বচ্ছতা আছে, সেখানে আপনি বলবেন। যতো বড় করে বলা যায়, যতো উঁচু স্বরে বলা যায়, বলবেন। আমরা না শুনলে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবেন, শুনতে বাধ্য করবেন। কিন্তু আপনার কাজটা যেনো বস্তুনিষ্ঠ হয়। আপনি একটা ধারণার বশবর্তী হয়ে একটা রিপোর্ট করে দেবেন, খোঁজ নেবেন না। এমনকি সাংবাদিকতার ন্যূনতম এথিক্স, যার ব্যপারে রিপোর্ট করলেন তার সঙ্গেও অনেক সময় কথা বলেন না, রিপোর্ট করে দেন। এ জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ বাধার দেয়াল আপনারা তুলছেন, এ দেয়াল আপনাদেরই অপসারণ করতে হবে, আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031888484954834