শিক্ষাক্ষেত্র আর কতো কলুষিত হবে

মাছুম বিল্লাহ |

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যোগ্য প্রার্থীদের পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে অন্যদের চাকরি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যপ্রার্থীদের চেয়ে কম নম্বর পাওয়া ব্যক্তিরা ছাড়াও ব্ল্যাঙ্ক ওএমআর শিট জমা দিয়েও অনেক চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্ক্যান করা ওএমআর শিট ওওয়েবসাইটে আপলোড করা তালিকায় নম্বরের তফাৎ ধরা পড়েছে। এর ফলে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি। তারা এগারশ দিনের বেশি সময় ধরে আন্দোলনে করেছেন। এসব অভিযোগে মামলা হলে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী ও সাবেক বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো প্রভাবশালী নেতা এবং তাদের অনেক অনুগতরাও গ্রেফতার হয়েছিলেন। হাইকোর্ট এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে এসব কর্মকাণ্ড কিভাবে সম্ভব?

এসব  বিষয় মাথায় রেখেই কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলে করে দিয়েছে। ফলে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার প্রধান মমতা ব্যানার্জি রাজনৈতিক রায় বলে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি এ রায়কে ’ বেআইনি’ বলেও দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, রায় যা-ই হোক, চাকরিহারাদের পাশে আছি আমি। চাকরিহারা শিক্ষকদের তিনি চিন্তা করতে না করেছেন, হতাশ না হতে বলেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ২৬ হাজার শিক্ষক মানে দেড় লাখ পরিবার। আট বছর তারা চাকরি করেছেন। চার সপ্তাহে সুদসহ কয়েক লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে, এটি কি করে সম্ভব? মুখ্যমন্ত্রীর সবচেয়ে  বিস্ফোরক মন্তব্য হচেছ, এটা বিজেপির বিচারালয়। কেন্দ্র বেছে বেছে এখানে লোক বসিয়েছে, যাতে বিজেপির পার্টি থেকে যা বলে দেয় ওরা তাই করে। আমরা চাকরি দিচিছ আর ওরা আইনের খোঁচায় নিয়ে যাচেছ। 

তার মানে, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে সেটি এক ধরনের রাজনীতি, আর যে রায় হয়েছে সেখানেও কিছুট অন্য গন্ধ পাওয়া যাচেছ।

আদালতের রায় ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে কমিশন খুশি নয়। কারণ ৫ হাজার জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেখানে কেনো ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হবে। 

এখানে কর্তৃপক্ষের যে উত্তর পাওয়া গেছে সেটি হলো, কিছু নিয়োগকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যেহেতু এই বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর মধ্যে তাদের আলাদা করা সম্ভব নয়, তাই ২০১৬ এর এসএসসির পুরো নিয়োগই বাতিল করা হয়েছে। 

যেহেতু এখন গোটা ভারতজুড়ে নির্বাচনের মৌসুম! তাই রাজ্য সরকার যে এতে অনেকটাই বেকায়দায় পড়েছে তা বুঝাই যাচেছ।

তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকদের অধপতন, শিক্ষা বিভাগের দুর্নীতি আমাদেরকেও যেনো লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। 

এদিকে ন্যায্য চাকরির দাবিতে প্যানেলভুক্ত হাজারো প্রার্থী মামলার রায়ের পর বলছেন, যতো শীঘ্র সম্ভব নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হোক। অযোগ্যদের চাকির হাইকোর্ট বাতিল করেছে, এখন যারা যোগ্য তাদের চাকরি বহাল রাখা হোক। 

এমন পরিস্থিতিতে ঢালাওভাবে সকল শিক্ষককে পথে বসিয়ে দেওয়াটা কতোটা  যৌক্তিক তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, হবেও। কিন্তু শিক্ষকদের মান-সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ পাওয়া উচিত। তবে শিক্ষক হিসেবে যারা নিয়োগ পাবেন তারা যাতে সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসেন। সামান্য স্বার্থের কারণে সেটি দলগত বা গোত্রগত যাইহোক না কেন, শিক্ষাক্ষেত্রকে যেনো কলুষিত করা না হয়। যেটা যে দেশেরই হোক। 

লেখক : ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024878978729248