শিক্ষাজীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ নিয়েও দলীয় প্রভাবে প্রধান শিক্ষক তিনি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী |

প্রধান শিক্ষক হতে হলে শিক্ষাজীবনে একের অধিক তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক এমনকি বিএডে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েও মাইনুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। তারপর আত্মসাৎ করেছেন স্কুলের অর্ধকোটি টাকা। রাজশাহীর তানোর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব করেছেন। জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মাইনুল এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। এরপর কোনো রাখঢাক না রেখেই অর্থ আত্মসাৎ করে চললেও কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মঞ্জুর রহমান নামের একজন সহকারী শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছেন। তবে এখনও কোনো তদন্তই শুরু হয়নি। শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মাইনুল প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরেই বিদ্যালয়ের ১০টি দোকান ভাড়া দেন। তখন ১৫ লাখ টাকা জামানত নেন। এই টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে নেই। পুরোটিই আত্মসাৎ করেন তিনি। গত পাঁচ বছরে দোকান ভাড়া বাবদ আদায় করা ১১ লাখ টাকাও গেছে তার পকেটে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন। কয়েকবছরে এ খাতের সাড়ে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জেএসসি ও এসএসসির শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সময় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা অতিরিক্ত তুলে আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত নিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। মাইনুল প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরে কেন্দ্র ফি বাবদ প্রাপ্ত ৬ লাখ টাকা ও টিআর প্রকল্পের ৬ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে আসা আরও ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। পাস করা শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়ার সময় লুটে নেন আরও ৪ লাখ টাকা।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হবে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক শিক্ষকদের কাছ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আদায় করেন। বিদ্যালয় সরকারিকরণ না হলে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দেননি। মাইনুল দায়িত্ব গ্রহণের পরই আগের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলীর ছাড়পত্র জিম্মি করে তার কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় করেন তিনি। অভিযোগের সঙ্গে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্টও দিয়েছেন সহকারী শিক্ষক মঞ্জুর রহমান।

অভিযোগে বলা হয়, যোগ্যতা না থাকলেও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তাকে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর কথামতো বিদ্যালয় গভর্নিং বডির তৎকালীন সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না দলীয় বিবেচনায় তাকে নিয়োগ দেন।

মঞ্জুর রহমান বলেন, আগের প্রধান শিক্ষকের আমলে আমাদের এফডিআর ছিল ১০ লাখ টাকা। এই টাকা আদৌ আছে, নাকি প্রধান শিক্ষক মাইনুল তুলে নিয়েছেন সেটাও আমরা জানি না। আমার আশঙ্কা, এই টাকাও নয়ছয় হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম বলেন, আমার নিয়োগ বিধি-বিধানের ভেতর থেকেই হয়েছে। তা না হলে আমার বেতন হতো না। আর যে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। ইউএনও আমার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। তিনি সবকিছু দেখবেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। ইউএনওর দফতরেও অভিযোগ গেছে। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

তানোরের ইউএনও খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি দুইদিন হলো যোগ দিয়েছি। বিষয়টি এখনও জানি না। তদন্ত কমিটি হলে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে। তারা যে প্রতিবেদন দেবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006364107131958